ব্যাংক হিসাব কি ও ব্যাংক হিসাব খোলার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের মাঝে। আপনারা যারা ব্যাংক হিসাব খুলতে আগ্রহী অথবা এখন ব্যাংক হিসাব খুলতে চাচ্ছেন, তারা নিশ্চয়ই এই বিষয়ে সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করছেন।
তাহলে তো আর কোনো চিন্তা নেই আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। এখানে আপনি আপনার জানার বিষয়টির সাথে সাথে ব্যাংক হিসাব করার পদ্ধতি নিয়ে উঠে জানতে পারবেন খুব সহজে।
তাইতো আর দেরি না করে চলুন নিচের তথ্য সম্বলিত লেখা গুলো পড়ে নিন।
ব্যাংক হিসাব কি
প্রথমেই জেনে নিন ব্যাংক হিসাব কি? যে বিশেষ পদ্ধতিতে ব্যাংক জনগণের আমানতের টাকা জমা ও ফেরত দেওয়ার হিসাব রাখে তাকে ব্যাংক হিসাব বলে। অর্থাৎ ব্যাংকে যে হিসাবের মাধ্যমে গ্রাহকদের লেনদেন করে তাকে ব্যাংক হিসাব বলে।
ব্যাংক একটি মধ্যস্থ ব্যবসায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকার কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল জনগণের নিকট হতে আমানত গ্রহণ করা এবং উক্ত আমানত হতে টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া।
ব্যাংকের নিজস্ব নথিপত্রে যে প্রতীক বা ঠিকানার মাধ্যমে প্রতিটি মক্কেলের জমা ও উত্তোলন ব্যবহার করে দেখানো হয়, তাকে ব্যাংক হিসাব বলে।
ব্যাংক হিসাব কত প্রকার
সমাজে বিভিন্ন ধরনের লোক বাস করে। এদের প্রত্যেকের চাহিদা ও পছন্দ আবার বিভিন্ন ধরনের। তাই এদের প্রত্যেকের পছন্দ অসুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের হিসাব খোলার ব্যবস্থা রয়েছে।
জেনে নিন ব্যাংক হিসাব কত প্রকার ও কি কি।
ব্যাংক হিসাব চার প্রকার। এগুলো হলো:
১। চলতি হিসাব
২। সঞ্চয়ী হিসাব
৩। স্থায়ী হিসাব এবং
৪। বিশেষ ধরনের হিসাব
এই চারটি হিসাব আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। নিচে প্রকারভেদ গুলো দেখানো হলো।
১। চলতি হিসাব:
চলতি হিসাব মূলত দুই রকম হয়ে থাকে। (ক) বিশেষ চলতি হিসাব এবং (খ) সাধারণ চলতি হিসাব।
২। সঞ্চয়ী হিসাব:
সঞ্চয় হিসাব ৭ ধরনের হয়ে থাকে।
ক. গৃহ সঞ্চয়ী হিসাব
খ. স্কুল সঞ্চয়ী হিসাব
গ. মহিলা সঞ্চয়ী হিসাব
ঘ. শ্রমিক সঞ্চয়ী হিসাব
ঙ. পেনশন সঞ্চয়ী হিসাব
চ. বিমা সঞ্চয়ী হিসাব এবং
ছ. ক্রমো সঞ্চয়ী আমানতী হিসাব।।
৩। স্থায়ী হিসাব:
স্থায়ী হিসেবে আলাদা কোন প্রকারভেদ নেই।
৪। বিশেষ ধরনের হিসাব:
বিশেষ ধরনের হিসাব চার রকমের হয়ে থাকে।
ক. ঋণ আমানতি হিসাব
খ. বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব
গ. বৈদেশিক মুদ্রা মেয়াদী হিসাব
ঘ. অনিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব।।
ব্যাংক হিসাব খোলার পদ্ধতি
উপরে আপনি জানতে পারলেন ব্যাংক হিসাব কি, ব্যাংকে হিসাব বলতে কী বোঝায় এবং ব্যাংক হিসাব কত প্রকার। এবার তাহলে জেনে নিন ব্যাংক হিসাব খোলার পদ্ধতি সম্পর্কে।
বাংলাদেশের যে কোনো ব্যক্তি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারে। কিন্তু কোন হিসাব খোলার জন্য তাকে অবশ্যই কতগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এ পদ্ধতি গুলো নিম্নে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
১. হিসাবের প্রকৃতি মনোনয়ন: ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকার হিসাব রয়েছে এ কারণে প্রথমে কোন ধরনের হিসাব খোলা হবে সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
২. আবেদনপত্র সংগ্রহ: এইসবের প্রকৃতি বা ধরন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হতে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এ আবেদন পত্রের ফরম ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির নিকট সংরক্ষিত থাকে। উক্ত ব্যক্তির নিকট থেকে বা অন্য কারো মাধ্যমে এই ফরম সংগ্রহ করা যায়।
৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত: হিসাব খুলতে আগ্রহী ব্যক্তিকে আবেদনপত্রের সাথে সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত তিন কপি ছবি জমা দিতে হয়।
তাছাড়াও যুক্ত হিসাব, অংশীদারি ব্যবসায়, যৌথ মূলধনী কোম্পানি, সমবায় সমিতি সংস্থা, অথবা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাব খোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আবেদনপত্রের সাথে দাখিল করতে হয়।
৪. শনাক্তকরণ: আবেদনকারীকে কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি অথবা উক্ত ব্যাংকে হিসাব আছে এমন কোন আমানতকারী করতে আবেদনপত্রে আবেদনকারীকে শনাক্ত করতে হবে।
৫. আবেদনপত্র জমা: অতঃপর আবেদন পত্র যথা নিয়মে পূরণ করে ব্যাংকের ম্যানেজার বা কর্মকর্তার নিকট জমা দিতে হবে।
৬. নমুনা স্বাক্ষর প্রদান: ব্যাংকে আবেদনকারীকে নমুনা স্বাক্ষর এর কার্ড সরবরাহ করে থাকে। আবেদনকারী কার্ডে নমুনা স্বাক্ষর প্রদান করে থাকে।
৭. প্রাথমিক আমানত: ব্যাংকে হিসাব খোলার অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথে আবেদনকারীকে প্রাথমিক আমানতের জন্য টাকা জমা দিতে হয়। প্রাথমিক গণনাতে টাকা সাধারণত ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
৮. চেক, পাস বই ও টাকা জমার রশিদ বই প্রদান: প্রাথমিক আমানুজ জামার সাথে সাথে ব্যাংকের সঙ্গে আবেদনকারীর গ্রাহক-ব্যাংকার সম্পর্কে সৃষ্টি হয়। এ পর্যায়ে ব্যাংক আবেদনকারীকে একটি চেক বই, একটি পাস বই ও একটি টাকা জমার রশিদ বই প্রদান করে থাকে।
উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণের পর কোন ব্যক্তির ব্যাংকের হিসাব খোলার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ব্যাংকে হিসাব খোলা কার্যপদ্ধতি সম্পন্নের সাথে সাথে উক্ত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান অথবা সংস্থাকে ব্যাংকের মক্কেল বা গ্রাহক বলে গণ্য করা হয়।
ব্যাংক হিসাবের শিরোনাম কি
ব্যাংক হিসাবের শিরোনাম বলতে বোঝায় ব্যাংক হিসাব কার নামে খোলা হবে এবং উক্ত হিসাব কার নামে নিবন্ধিত হবে।
যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয় সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসেবে শিরোনাম দেওয়া হয়ে থাকে।
ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় কয়টি
ব্যাংক হিসাব কি এই তথ্য জানার পাশাপাশি জেনে নিন ব্যাংকে সব খোলার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় সম্পর্কে। ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিবেচ্য বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো।
১। গ্রাহকের প্রকৃতি
২। লেনদেনের প্রকৃতি ও পরিমাণ
৪। ব্যাংকিং সুবিধা
৫। সুদ বা মুনাফা
৬। ঋণ সুবিধা
৭। অলস ও উদ্বৃত্ত অর্থ
৮। নিরাপদ সংরক্ষণ
৯। ব্যাংকের সুনাম
সঠিক ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে উপরের উক্ত বিবেচ্য বিষয়গুলো বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতএব আপনি যদি ব্যাংক হিসাব খুলতে চান তাহলে ওখানে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।
আরও পড়তে ভিজিট করুনঃ
করের উদ্দেশ্যসমূহ এবং পরের গুরুত্ব সমূহ
শেষ কথা
ব্যাংক হিসাব কি ও ব্যাংক হিসাব খোলার পদ্ধতি নিয়ে লেখা আমাদের আজকের এই পোস্টে আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে। এখান থেকে আপনারা আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে কাজে লাগাতে পারবেন।
এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। পোস্ট সম্পর্কে কোন কিছু বলার থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন।
আজ এ পর্যন্তই। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ধরনের পোস্ট আপডেট পেতে আমাদের সাইটের সাথেই থাকুন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।।