hablmondal

কর নির্ধারণ

কর নির্ধারণ পদ্ধতি ও কর নির্ধারণী চক্র কি?

কর নির্ধারণ পদ্ধতি ও কর নির্ধারণী চক্র কি?

কর নির্ধারণ পদ্ধতি হলো একজন করদাতা তার আয়কর প্রদানের জন্য যে প্রক্রিয়া সমূহ অবলম্বন করে সেই প্রক্রিয়া। একজন করদাতা কিভাবে তার কর নির্ধারণ করবে এবং কোন পদ্ধতিতে কর প্রদান করবে এ বিষয় সম্পর্কে এখান থেকে জানতে পারবেন। 

 

আরো জানতে পারবেন কর নির্ধারণী চক্র সম্পর্কে। নিচে বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো। এখান থেকে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে পারবেন খুব সহজে। 

 

তাহলে চলুন আর দেরি না করে আলোচনায় যাওয়া যাক।

 

কর নির্ধারণ পদ্ধতি 

কর নির্ধারণ করতে আয়কর ধৈর্যের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল কার্যাবলীকে বোঝায়। অর্থাৎ কর নির্ধারণ চক্রের যাবতীয় কার্যাবলী কে আমরা কর নির্ধারণ সংক্রান্ত কার্যাবলী বলতে পারি। 

 

আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫, ৭৭ এবং ৭৮ ধারা অনুযায়ী দাখিলকৃত আয়ের বিবরণীর উপর ভিত্তি করে অথবা ডিসিটি যাকে যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি মনে করেন তার উপর ভিত্তি করে কর নির্ধারণ করে থাকেন। 

 

কর নির্ধারণ পদ্ধতি সমূহ নিচে আলোচনা করা হলোঃ

(ক) সাময়িক কর নির্ধারণ (ধারা ৮১);

 

(খ) নিয়মিত কর নির্ধারণ: নিয়মিত কর্ণের ধর্মের মধ্যে রয়েছে, 

১। সঠিক রিটার্নের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ (ধারা ৮২)

২। সহজ পদ্ধতিতে কর নির্ধারণ (ধারা ৮২ এ)

৩। সার্বজনীন স্ব-নির্ধারণী পদ্ধতিতে কর নির্ধারণ (ধারা ৮২ বিবি)

৪। কতিপয় ব্যক্তির আয়ের জন্য কর নির্ধারণ (ধারা ৮২ সি)

৫। স্পট কর নির্ধারণ (ধারা ৮২ ডি)

৬। শুনানির পর কর নির্ধারণ (ধারা ৮৩)

৭। চার্টার্ড একাউন্টেন্টের রিপোর্ট ভিত্তিক কর নির্ধারণ (ধারা ৮২ এএএ)

৮। সর্বোত্তম বিচার ভিত্তিক কর নির্ধারণ (ধারা ৮৪)

৯। মৃত ব্যক্তির আয়ের উপর কর নির্ধারণ (ধারা ৯২)

১০। এড়িয়ে যাওয়া আয়ের উপর কর নির্ধারণ (ধারা ৯৩)

 

(গ) জরুরী কর নির্ধারণ: জরুরী ভিত্তিতে নিম্নোক্ত কর নির্ধারণ করা হয়।

১। বন্ধ হওয়া ব্যবসার কর নির্ধারণ (ধারা ৮৯)

২। বাংলাদেশ ত্যাগকারী ব্যক্তিবর্গের কর নির্ধারণ (ধারা ৯১)

৩। অনিবাসীর শিপিং ব্যবসার ক্ষেত্রে কর নির্ধারণ (ধারা ১০২)

৪। অনিবাসীর বিমান পরিবহন ব্যবসার ক্ষেত্রে কর নির্ধারণ (ধারা ১০৩ ক)

 

কর নির্ধারণী চক্র কি 

কর নির্ধারণ পদ্ধতি আলোচনার পর এখন আলোচনা করা হচ্ছে কর নির্ধারণী চক্র সম্পর্কে। আসুন জেনে নিই কর নির্ধারণী চক্র কি?

 

কর নির্ধারণের বিভিন্ন কার্যক্রমের পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হওয়াকে কর নির্ধারণী চক্র বলে। 

 

কর নির্ধারণ বলতে করদাতার মোট আয় নির্ণয় পূর্বক মোট কর নির্ণয় করা এবং সেখান থেকে কর অবকাশ, কর-রেয়াত, উৎস কর, অগ্রিম কর ও কর বিমোচন বাদ দেওয়ার পর নেট কর দেয় নির্ণয় ও পরিশোধ করাকে বোঝায়। কর নির্ধারণের প্রথম ধাপটি শুরু হয় আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকরণের দিয়ে এবং শেষ হয় কর ফেরত প্রদানের মাধ্যমে।

 

এটি পর্যায়ক্রমে একজন করদাতার সাথে চক্রাকারে সংশ্লিষ্ট বলে, কর নির্ধারণের পর্যায়ক্রমিক কার্যক্রম কে কর নির্ধারণ চক্র (Assessment Cycle) বলে।

 

কর নির্ধারণী চক্র ধাপ

কর নির্ধারণী চক্রের মোট ১১ টি ধাপ রয়েছে। ধাপগুলো হলো: 

 

১। উৎস কর ও অগ্রিম কর প্রদান;

২। আয় বিবরণী প্রস্তুতকরণ; 

৩। আয়কর প্রদান;

৪। আয় বিবরণী দাখিল; 

৫। কর নির্ধারণ;

৬। দাবির নোটিশ প্রদান;

৭‌। দাবির নোটিশ অনুসারে কর প্রদান;

৮। জরিমানা আরোপ;

৯। জরিমানা সহ খিলাপি করদাতার কাছ থেকে কর আদায়;

১০। আপিল ও পুনঃনিরীক্ষা;

১১। কর ফেরত।।

 

কর নির্ধারণী চক্রের বিভিন্ন ধাপ সমূহ সম্পর্কে নীচে পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো: 

১। উৎস কর ও অগ্রিম কর প্রদান (Tax deductions at source and advance payment at tax ধারা ৪৮): 

১৯৮৪ সালের আয় অধ্যাদেশের ৪৮ ধারা অনুযায়ী কর নির্ধারণী চক্রের প্রথম ধাপ হল উৎস কর কর্তন ও অগ্রিম কর পরিশোধ। আয়কর অধ্যাদেশের সপ্তম অধ্যায়ের ৪৮ থেকে ৫৬ ধারা পর্যন্ত অগ্রিম পরিষদের বিধানাবলী সন্নিবেশিত আছে। 

 

২। আয় বিবরণী প্রস্তুতকরণ (preparation of return): 

অধ্যাদেশের ৭৫ (২) ধারা অনুসারে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করতে হয়। বিধি ২৪ অনুসারে স্বাভাবিক আয়কর রিটার্ন ফরম ও স্ব নির্ধারণী আইকন রিটার্ন ফরম নামে ভিন্ন ভিন্ন দুটি ফরম রয়েছে। 

 

রিটার্নে ফর্মে আয়ের শ্রেণীবিভাগ অনুসারে বিভিন্ন খাতের মোট আয় নির্ধারণ করে মোট করদায় ও নীট করদায় উল্লেখ করতে হয়। রিটার্নের সাথে নীট করদায় পরিশোধের চালান সংযুক্ত করতে হয় এবং সম্পত্তি ও দায়ের বিবরণী পূরণ করতে হয়।

 

আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকরণ বলতে শুধু রিটার্ন ফর্ম পূরণ করাকে বোঝায় না, সেই সাথে প্রয়োজনীয় দলিল পত্র প্রস্তুত করানো আবশ্যকীয় কাজ। এরপর করদাতা নিজে বা তার বৈধ প্রতিনিধির মাধ্যমে লিটনের প্রদর্শিত তথ্যাবলী সঠিক ও নির্ভুল ঘোষণা দিয়ে স্বাক্ষর কার্য সম্পাদন করবেন। 

 

৩। আয়কর প্রদান: রিটার্ন অনুযায়ী মোট আয় নির্ধারণ করে মোট কর নির্ণয় করতে হবে। অতঃপর মোট কর থেকে উৎস কর অগ্রিম কর অবহার ও বিনিয়োগ কর রিয়াদ বাদ দেওয়ার পর নীট করদায় নির্ণয় করে রিটার্ন দাখিল এর তারিখে বা তার পূর্বে প্রদেয় কর বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারিতে বা সাব ট্রেজারিতে নির্ধারিত সোনালী ব্যাংকের শাখায় আইটি ৩১ (বি) সংশোধিত ফরমের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।

 

ফরমের একটি অংশ বা চালান রিটার্ন এর সাথে সংযুক্ত করতে হয়। কর নির্ধারণ পদ্ধতি।

 

৪। আয় বিবরণী দাখিল: আয়কর আইন অনুযায়ী রিটার্ন ফরম প্রস্তুতকরণ ও রিটার্ন অনুযায়ী কর পরিষদ করার পর প্রয়োজনে কাগজপত্র সহ আয়কর রিটার্ন উপকর কমিশনারের নিকট জমা দিতে হবে ‌।

 

সকল কোম্পানী, ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। 

 

৫। কর নির্ধারণ: উপকর কমিশনার রিটার্ন পাওয়ার পর পর দাতার বিভিন্ন খাতের আয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর কর নির্ধারণের কাজ সমাপ্ত করেন। তবে রিটারনে প্রদর্শিত তথ্যাদি সম্পর্কে ডেসক্রি সন্তুষ্ট না হলে পর্দা থাকে ৮৩ (১) ধারা অনুসারে নোটিশ প্রদান করবেন।

 

নোটিশে উল্লেখিত দিনে ব্যক্তিগত শ্রবণের মাধ্যমেও উপস্থাপিত তথ্যাদের সাথে একমত হলে উপযুক্ত নিয়মে কর নির্ধারণ করে ৩০ দিনের মধ্যে কর দাতাকে জানিয়ে দিবেন।

 

৬। দাবির নোটিশ প্রদান: ডিসিটি নিয়মিত কর নির্ধারণের মাধ্যমে যদি দেখেন যে পর্দা তাকে আরো কল দিতে হবে তাহলে অধ্যাদেশের ১৩৫ ধারা অনুসারে করদাতাকে দাবি নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশে করের পরিমাণ ও কত দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে তা উল্লেখ থাকে। 

 

নোটিশে উল্লেখিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও করদাতারা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিসিটি আরো সময় বাড়াতে পারে। খুব তারপরও করদাতা কর পরিশোধ না করলে করদাতাকে খেলাপি করদাতা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

৭‌। দাবির নোটিশ অনুসারে কর প্রদান: দাবি নোটিশ পাবার পর কর দাতা প্রদেয় কর এককালীন পরিশোধ করতে পারে বা সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে পারে পরিষদের আবেদন করতে পারে। 

 

ডিসিটি কর পরিষদের সময়সীমা বাড়াতে পারে বা কিস্তিতে পরিশোধের অনুমতি প্রদান করতে পারে। ডিসিটি যেটা অনুমতি দেবেন সে অনুযায়ী করদাতাতে থাকে কর পরিশোধ করতে হবে।

 

৮। জরিমানা আরোপ: কলকাতা ডিজিটাল নোটিশের শর্তাবলী ও অন্যান্য ধারা অনুসারে জরিমানা ধার্য করতে পারেন। এছাড়া আয়েকার আইনের ১৬৪ থেকে ১৭১ ধারা অনুসারে বিভিন্ন প্রকার শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে। কর নির্ধারণ পদ্ধতি ও কর নির্ধারণী চক্র।

 

৯। জরিমানা সহ খেলাপি করদাতার কাছ থেকে কর আদায়: জরিমানা সহ কর আদায়ের জন্য কর্তৃপক্ষ ১৩৪ ধারা থেকে ১৪৩ ধারা পর্যন্ত যেকোনো ধারা অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।ডিসিটি, কর আদায়কারী অফিসার কে করা আদায়ের সার্টিফিকেট ইস্যু করে কর আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিতে পারেন। 

 

এছাড়াও ডিসিটি, জেলা কালেক্টর এমনকি বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে করা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে কর বলতে শুধু জরিমানা, ফি, অর্থদণ্ড ইত্যাদি সহ মোট প্রদেয় করকে বোঝায়।

 

১০। আপিল ও পুনঃনিরীক্ষা: কোন করদাতা কর নির্ধারণী কর্মকর্তার আদেশে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করলে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নিকট আপিল করতে পারবেন। কোম্পানির গরদাতারা প্রথম আপিল করবেন কর কমিশনারের নিকট এবং অন্য পর্দা দ্বারা আপিল করবেন আপিলেট অতিরিক্ত কর কমিশনারের কাছে 

 

পরবর্তীতে প্রথম আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে কর নির্ধারণিক কর্মকর্তা এবং করদাতা উভয়ই আপিল করতে পারবেন কর অ্যাপিলেট ট্রাইবুনালের নিকট। 

 

অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন প্রথমে হাইকোর্ট ডিভিশনে ও পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ডিভিশন সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হওয়া যাবে। 

 

১১। কর ফেরত: আয়কর অধ্যাদেশের অষ্টাদশ অধ্যায়ের ১৪৬ ধারা থেকে ১৫২ ধারা পর্যন্ত কর ফেরত সংক্রান্ত বিধানাবলী আলোচনা করা হয়েছে। করদাতা যদি কোন ভাবে কর কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে, তার প্রদত্ত করার পরিমাণ প্রকৃত করে চেয়ে বেশি তাহলে অতিরিক্ত প্রদত্ত কর ফেরত পাবেন। 

 

আপিল আদেশের মাধ্যমে ও করদাতা কর ফেরত পাওয়ার যোগ্য হতে পারে। ফেরত যজ্ঞ করে পরিমাণ কর্তৃপক্ষ কর দাতার অন্যান্য প্রত্যক্ষ কর, যেমন- দান কর, সম্পদ কর ইত্যাদির বিপরীতে সমন্বয় করতে পারেন।

 

শেষ কথা 

এখানে কর নির্ধারণ পদ্ধতি ও কর নির্ধারণী চক্র সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আপনার এখান থেকে আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পেয়ে গেছেন। 

 

উপরের কর নির্ধারণী চক্রের ধাপগুলো যেভাবে আলোচনা করা হয়েছে, সাধারণত সেভাবেই কর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তবে বাস্তবে কোনটি আগে কোনটি পরে হতে পারে।