প্রত্যক্ষ কর
যে করে দায় কোনোভাবেই এড়ানো যায় না বা অন্যের উপর চাপানো যায় না তাকে প্রত্যক্ষ কর বলে।
অধ্যাপক জে এস মিলের মতে,
“কোন ব্যক্তির উপর কর আরোপিত হলে সে তা পরিশোধের সংকল্প বা ইচ্ছা পোষণ করলে তাকে প্রত্যক্ষ কর বলে। “
প্রত্যক্ষ করের উদাহরণঃ
আয়কর, উত্তরাধিকার কর বা ভূমি রাজস্ব ইত্যাদি।
প্রত্যক্ষ কর করদাতারর সততার ওপর নির্ভর করে তাই নাগরিকগণ এই ঘর ফাঁকি দিতে উদ্বুদ্ধ হয়। করদাতা নানাবিধ অসাধু উপায় অবলম্বন এবং মিথ্যা হিসেব দাখিলের মাধ্যমে কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। এ থেকে বোঝা যায় প্রত্যক্ষ কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। আবার অনেক সময় এটি সরকার ইচ্ছামতিক ধার্য করে। করদাতার সামর্থ্য বিবেচনা না করে কর্মচারীগণ ইচ্ছা মতো কর নির্ধারণ করে। এর ফলে স্বেচ্ছাচারী কর হয়।
দুটি প্রত্যক্ষ করের নামঃ ১। আয়কর ২। ভূমি রাজস্ব।
পরোক্ষ কর
কোন ব্যক্তির ওপর কর ধার্য করা হলো এবং সে ব্যক্তি করের ভার অন্যের উপর চাপাতে পারল তাহলে তাকে পরোক্ষ কর বলা হবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বিক্রয় কর বা ভ্যাট বিক্রেতার নিকট হতে আদায় করা হলেও বিক্রেতা উক্ত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে।
পরোক্ষ কর ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। পরোক্ষ কর পরিষদ এবং আদায় সুবিধা জনক।
অধ্যাপক জে এস মিলের মতে,
“পরোক্ষ কর হল এমন একটি কর যা কোন ব্যক্তির উপর আরোপিত হলে এটা মনে করা হয় বা প্রত্যাশিত হয় যে সে ঘরের ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে ভার মুক্ত থাকবে।”
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়ঃ
বিক্রয় কর, প্রমদ কর, ভ্রমণ কর আমদানি শুল্ক ইত্যাদি।
নিম্নে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ করে পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
প্রত্যক্ষ কর
১. প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে কর ঘাত এবং পরপাত একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বহন করতে হয়।
২. এ করার পরিমাণ নির্দিষ্ট বা নিশ্চিত কর। এক্ষেত্রে করদাতা কর পরিষদের সময় পরিমাণ ইত্যাদি সম্বন্ধে অবহিত থাকে।
৩. প্রত্যক্ষ কর নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে।
৪. প্রত্যক্ষ কর পরিষদ করা একটু কষ্টসাধ্য এখানে নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন অনুসরণ করতে হয়।
৫. প্রত্যক্ষ করের প্রভাব ব্যক্তির ওপর কঠোরভাবে পড়ে। কারণ এই কর প্রত্যক্ষভাবেই পরিশোধ করতে হয়।
৬. প্রত্যক্ষ করে আওতা বা ব্যাপকতা ব্যাপক নয়। প্রত্যক্ষ কর শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিদের উপরেই আরোপ করা হয়।
৭. এ করারপের বিষয় হচ্ছে এটি শুধু ব্যক্তির উপর আরোপ করা হয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিদের উপর এই প্রত্যক্ষ কর আরোপ করা যেতে পারে।
৮. প্রত্যক্ষ কর আদায় করতে সরকারি খরচের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৯. প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে সম্পদের বিবরণ দাখিল করতে হয় কিন্তু অনেক সময় ব্যবসায়ী প্রয়োজনে উক্ত সম্পদের হিসাব গোপন রাখতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার সম্ভব হয় না।
আরও পড়তে ভিজিট করুনঃ
কর নির্ধারণ পদ্ধতি ও কর নির্ধারণী চক্র কি?
পরোক্ষ কর
১. পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে করঘাট একজন এবং পরপাত অন্যজন বহন করে।
২. পরোক্ষ করের নিশ্চয়তা করদাতা কর্পরিষদের সময় পরিমাণ ইত্যাদি সম্মোহিত অবহিত থাকে না।
৩. পরোক্ষ কর নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে না।
৪. পরোক্ষ কর পরিষদ অনেকটা প্রত্যক্ষ করার চাইতে সুবিধা জনক। এই কর দ্রব্যমূল্যের মধ্যেই অন্তর্ভূত থাকে বলে দ্রব্য ক্রয়ের মাধ্যমে কর পরিষদ করা যায়।
৫. পরোক্ষ করের করের অংশ দ্রব্যের মূল্যের মধ্যে থাকে তাই এটি প্রত্যক্ষভাবে প্রদান করতে হয় না। এর ফলে ব্যক্তির ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না।
৬. পরোক্ষ কর ধনী গরিব নির্বিশেষে সবাইকেই এর আওতায় নিয়ে আসা যায়। তাই এর ব্যাপকতা বেশি।
৭. পরোক্ষ কর কর পাত ভক্তার উপর পরে বলে উৎপাদনকারী অথবা বিক্রেতা সরকারের পক্ষ হয়ে নিজ দায়িত্বে আদায় করে নেয়। যেহেতু এই কর উৎপাদনকারী অথবা বিক্রেতা আদায় করছে তাই এর আদায় খরচ কম।
৮. পরোক্ষ করের মাধ্যমে নতুন প্রতিষ্ঠিত শিল্প বিদেশি শিল্পের প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। প্রয়োজনে পরোক্ষ পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেশে নতুন শিল্পকে সহযোগিতা করা হয়।
৯. পরোক্ষ কর দেশের জনগণের নিকট জনপ্রিয়। এ জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হলো পরোক্ষ কর প্রদানের সময় পর্দাটা পরের বোঝা প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করতে পারে না।
১০. অবৈধ অথবা দেশে উৎপাদিত পণ্য থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে বাধা দেওয়া যায়।
১১. পরোক্ষ করের মাধ্যমে দেশের অর্থ অপচয় কমানো যায়। যেমন বিলাস দ্রব্যের উপর পরোক্ষ করার ওপর ফলে বিলাস দ্রব্য ক্রয় থেকে নাগরিকগণ বিরত থাকে।
আরও পড়তে ভিজিট করুনঃ
প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ কর সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা
করঘাত ও করপাত কি || কর ও ফি কি
শেষ কথা
প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ করের মধ্যে পার্থক্য উপরোক্ত আলোচনা হতে আমরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর কাকে বলে তা জানতে পারলাম। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ করে পার্থক্য সম্পর্কে বিশদ ধারণা পেলাম। এবং পরোক্ষ করের ভেতরে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেলেও। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর উভয়ই দেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।