বাংলাদেশের করবিধি

করঘাত ও করপাত কি || কর ও ফি কি

কয়ঘাত ও করপাত কি এই বিষয়ে আপনারা যারা জানতে আগ্রহী তাদের জন্য সাজানো হলো আজকের এই পোস্ট। এখানে করঘাত ও করপাত এর বিভিন্ন বিষয় জানার পাশাপাশি আপনি আরো জানতে পারবেন কর ও ফি এর সাথে সাথে সারচার্জ সম্পর্কে।

প্রথমে আপনারা জেনে নিতে পারবেন কর কাকে বলে?, ফি কাকে বলে?, কর ও ফি এর মধ্যে পার্থক্য, করের শ্রেণীবিভাগ এবং করপাত ও করঘাত কি?  তাহলে আর দেরি না করে নিচের লেখাগুলো পড়ে নিন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করুন।

কর কাকে বলে?

করঘাত ও করপাত কি এই তথ্য জানার জন্য আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে কর কাকে বলে। এই ধারণা আপনি এখানে সুস্পষ্টভাবে পেয়ে যাবেন। 

কর বলতে প্রকৃত অর্থে বোঝায়, সরকার বা রাষ্ট্রের কাছ থেকে সরাসরি কোনো প্রতিদান প্রত্যাশা না করে জনগণ সরকারকে তার কার্যাবলী পরিচালনার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে যে অর্থ বা চাঁদা প্রদান করে তাকে। 

 

সরকারের নানাবিধ ব্যয়ের খাত রয়েছে যেমন শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত, প্রশাসনিক খাত, সমাজ কল্যাণ, প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা খাত ইত্যাদি আরও অনেক খাত। এই সকল খাতের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য সরকারকে জনসাধারণের নিকট থেকে বাধ্যতামূলকভাবে অর্থ আদায় করতে হয়, আর এই অর্থই হলো কর। 

 

অর্থাৎ কর হল সরকারকে প্রদত্ত জনগণের ও প্রতিষ্ঠানের বাধ্যতামূলক প্রদান যার বিনিময়ে জনগণ বা প্রতিষ্ঠান কোন সরাসরি প্রতিদান পায় না। তবে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের আনুপাতিক অংশীদার হতে পারে।

আরও পড়তে ভিজিট করুনঃ 

Top 10 ways How to earn money online in Bangladesh?

 

করঘাত কি? 

করঘাত কি? 

করদাতার সাথে করের প্রথম স্পর্শ বিন্দুকে করঘাত বলে। আবার করের প্রাথমিক আর্থিক ভারকে ও করঘাত বলে। করঘাতের আরো কয়েকটি নাম রয়েছে। যেমনঃ করঘাত, করের অসমভার, করের আপাত ভার। কর আরোপের পর কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক আর্থিক ভার বহন করতে হয়। 

 

কর দায় সৃষ্টির মাধ্যমে উক্ত পর আলোকিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আঘাত আনে বিধায় কর ঘাতকে করঘাত বলা হয়। আর প্রথম পর্যায়ে আঘাত আনে বিধায় করের এই ভাগকে অগ্রভার বলে। প্রাথমিক পর্যায়ের ভার অনেক ক্ষেত্রে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায়। 

 

অর্থাৎ করভার আপাতত যার ওপর পড়ে চূড়ান্তভাবে তার ওপর না থেকে অন্য কারো উপর বর্তায়। এজন্য করঘাতকে আপাত ঘাত ও বলা হয়। এই ঘরের আর্থিক ভার স্থানান্তর যোগ্য হয়। 

 

করপাত কি?

চূড়ান্ত পর্যায়ে করের ভার বহনকে করপাত বলে। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত করের আর্থিক বোঝা যার উপর পড়ে তাকে পরের ভার বহন করতে হয়, এ ঘরকে করপাত বলে। 

 

করপাতকে করের আপাতন বা করপাত বা করের চূড়ান্ত ভার বা করের পশ্চাৎ ভারও বলে। প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে করঘাত ও করপাত একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হয়। পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে করের আর্থিক ভার যার উপর প্রথম বর্তায় চূড়ান্ত ভার তার উপর বর্তায় না, পরের এই চূড়ান্ত আর্থিক ভারতে করপাত বলে।

 

ফি কাকে বলে 

সরকার কর্তৃক বিশেষ কোন সুবিধার বিনিময়ে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে ফি বলে। অর্থাৎ সরকার কোন ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা দানের মাধ্যমে তার নিকট হতে যে অর্থ আদায় করে তাকে ফি বলে।

 

ফি এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো রেজিস্ট্রেশন ফি, কোর্ট ফি,ভর্তি ফি, মোটরগাড়ি লাইসেন্স ফি ইত্যাদি আরো অনেক ফি।

 

ফি আদায় করা হয় সরকারের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। ফি এর কোন শ্রেণীবিভাগ নেই। এর আওতা বা পরিধি অতি ক্ষুদ্র।

 

কর ও ফি এর মধ্যে পার্থক্য

কর ও ফি এর মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য গুলো রয়েছে। 

কোনরূপ প্রত্যক্ষ উপকারের আশা না করে জনসাধারণ সরকারকে বাধ্যতামূলক যে অর্ধ প্রদান করা হয় তাকে কর বলে। যেমনঃ আয়কর ,মূল্য সংযোজন কর, সম্পদ কর ইত্যাদি।

 

পক্ষান্তরে সরকার কর্তৃক বিশেষ কোন সুবিধার বিনিময়ে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে ফি বলে। যেমনঃ রেজিস্ট্রেশন ফি, কোর্ট ফি,ভর্তি ফি, মোটরগাড়ি লাইসেন্স ফি ইত্যাদি।

 

কর সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হয়। কিন্তু সেই সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হয় না 

 

কর প্রদান করে পর্দা সরকারের কাছ থেকে কোন প্রত্যক্ষ সুবিধা পায়না। পক্ষান্তরে সেই প্রদান করে করদাতা সরকারের কাছ থেকে কোন না কোন প্রত্যক্ষ সুবিধা পায়। 

 

করের আওতা ব্যাপক। ফি এর পরিধি ছোট। এছাড়াও করের উৎস জনসাধারণের আয়, পন্য ক্রয়, বিক্রয় উৎপাদন, দাম ইত্যাদি। সেই সাধারণত বিশ্বাস কোন কার্যসম্পাদনের মাধ্যমে প্রদান করতে হয়।

 

কর সঞ্চালন কি 

যার উপর প্রাথমিক কর ধার্য করা হয় সে যদি করভার শেষ পর্যন্ত অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে পারে তাহলে করভার অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কার্যাবলীকে কর সঞ্চালন বা কর চালান বলে।

 

যেমনঃ চিনি উৎপাদনকারী এর উপর প্রতি এক মণ চিনি উৎপাদনের উপর ৫ টাকা আবগারি কর ধার্য করা হলো। প্রাথমিকভাবে করভার চিনি উৎপাদনকারী পরিশোধ করে। কিন্তু পরবর্তীতে এই ঘরের ভার ক্রেতাদের উপর চাপানোর জন্য উৎপাদন খরচের সাথে লাভ ও প্রদত্ত করে পরিমাণ যোগ করে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়। 

 

অর্থাৎ উৎপাদনকারী করের বোঝা শেষ পর্যন্ত ক্রেতার ওপর চাপিয়ে দিতে সক্ষম হলো। এই চাপিয়ে দেওয়ার কার্যাবলী হলো কর সঞ্চালন।

 

করঘাত ও করপাতের পার্থক্য 

করঘাত ও করপাতের পার্থক্য 

করঘাত ও করপাত কি এর সাথে সাথে জেনে নিন করঘাত ও করপাতের মধ্যে পার্থক্য গুলোঃ

 

১. করঘাত করের প্রাথমিক আঘাত অর্থাৎ করদাতার প্রথম স্পষ্ট কিছু হল করঘাত। অন্যদিকে কর পাত হলো দ্বিতীয় পর্যায়ের করাঘাত। অর্থাৎ প্রথম আঘাত যখন অন্যের উপর চাপানো যায় তখন তাকে করপাত বলে।

 

২. কর ভাতের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত করভার সবসময় প্রথম করদাতার ওপর পড়ে না। তবে প্রত্যক্ষ পরের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পড়ে অন্যদিকে পরপাত এর চূড়ান্ত করবার সর্বদা দ্বিতীয় পর্যায়ে করদাতার উপর পড়ে এবং তাকে বহন করতে হয়। 

 

৩. করঘাত অন্য কারো উপর চাপানো যায়, অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে কর সঞ্চালন সম্ভব। করপাতই কর সঞ্চালনের মাধ্যমে হয়। অতএব নতুন কোন সঞ্চালন এখানে নেই।

 

৪. করঘাতের আওতা সীমিত অর্থাৎ ছোট পরিসরে এই কর ধার্য করা হয়। অন্যদিকে করপাতের আওতা তুলনামূলক ভাবে বেশি।

 

সার চার্জ কি?

সম্পূরক ও শুল্ক স্যার চার্জ সরকারি আয়ের একটি অন্যতম উৎস। সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট শুল্ক আদায় ছাড়া ও সম্পূরক শুল্ক ও সার চার্জের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে।

 

শেষ কথা 

করঘাত ও করপাত কি জানার পাশাপাশি আপনি এখান থেকে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন কর, ফি সারচার্জ সম্পর্কে। এ তথ্যগুলো আশা করি আপনার অনেক উপকারে আসবে। 

এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন। পোস্ট সম্পর্কে কোন কিছু বলার থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।। ধন্যবাদ।।