বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রবৃদ্ধি ও উন্নতি

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস । এ জনপদে হাজার বছরেরও বেশি সময়ের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ বিস্তীর্ণ জনপদের বিচিত্র জনগোষ্ঠীর সুখ-দুঃখ এবং আনন্দে ভরপুর । বাংলা ভাষাভাষী এই অঞ্চলের অধিবাসীদের আদি পুরুষেরা ঠিক  কখন বাংলা ভাষায় কথা বলা শুরু করেছিল তার সঠিক দিনক্ষণ জানা সম্ভব হয়নি ।

 

তবে সাহিত্যের পণ্ডিতরা সাহিত্যের উদ্ভাবনকাল সম্পর্কে মতবিরোধ থাকলেও মোটামুটি সপ্তম শতক থেকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের বিকাশ শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হয় । বৌদ্ধ সাধু সন্ন্যাসীদের হাতে রচিত চর্যাপদ থেকে বাংলা সাহিত্যের শুভ সূচনা হয়েছিল । 

 

কালের বিবর্তনে সমৃদ্ধ সম্প্রসারিত হয়ে আজ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের অন্যতম বলে অধিষ্ঠিত হয়েছে বাংলা সাহিত্য। আজ আমাওরা লিখছি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশুদ্ধ বাঙালি জীবন ঐতিহ্যের ধারক বাহক এবং পরিচয় বহন করে । 

 

একটি বিশেষ ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে এই জনগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে ।  একই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে  যুগে যুগে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আর এই কারণেই বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল এখন বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়ে আছে । 

 

আর এর ফলেই বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে ধর্মে ছিল ভিন্নতা বৈচিত্র ছিল তাদের সংস্কৃতিতেও । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বাংলা ভাষাও সব যুগে একই বৈশিষ্ট্য মন্ডিত ছিল না । 

 

যুগে যুগে বাংলা ভাষার পরিবর্তন ঘটেছে, এই বিবর্তনের ফল আজকের এই রূপ। তাই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস জানতে এবং বুঝতে হলে বাংলা ভাষাভাষী ভূখণ্ডের সমসাময়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। 

 

এসব কারণেই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস কে জানতে হলে দেশ, জাত্‌ ধর্ম, সংস্কৃত্‌ ভাষা, লিপি এর সব কিছুর সঙ্গেই পরিচিত থাকা দরকার। 

 

বাংলাদেশ

কালের বিবর্তনের প্রেক্ষিতে বহু বিচিত্র জনপদের রূপান্তরের মাধ্যমে নানা জাতের মানুষের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ। প্রাচীন বাংলার সীমানা নির্ণয় করা কঠিন। 

 

 তবে উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত সমতল ভূমি নিয়ে প্রাচীন বাংলাদেশ গঠিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশ নাম এই দেশে  বসবাস করছি আমরা তা বর্তমান বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর অধ্যুষিত বিস্তৃত জনপদের একটা অংশ মাত্র। 

 

আমাদের এই বাংলাদেশের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিহার উড়িষ্যা ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যের কিছু অংশ এবং বার্মা বা বর্তমান মিয়ানমারের আরাকানে বাংলা ভাষাভাষী লোক বসবাস করে ।

 

বর্তমান বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী লোকের সংখ্যা আনুমানিক ২৫ কোটি। প্রথমে ভারতবর্ষ অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসন থেকে মুক্ত হয়। এরপর তৈরি হয় ভারত এবং পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্র। 

 

পাকিস্তানেরই পূর্ব পাকিস্তান নামে যে অংশটুকু ছিল সেটি আজকের বাংলাদেশ।  ১৯৭১ সালে মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানি উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয় বাংলাদেশ।

 

বর্তমান বাংলাদেশের সীমানা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মেঘালয় অরুণাচল ও আসাম রাজ্যস।  পূর্বে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা রাজ্য ও বার্মা এবং  দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বর্তমান বাংলাদেশের আয়তন এক লক্ষ 47 হাজার 570 কিলোমিটার। যার জনসংখ্যা ১৬ কোটির উপরে।

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে আরো দেখা যায় ব্রিটিশ শাসনামলে চট্টগ্রাম থেকে রাজমহল এবং হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বাংলাদেশের এলাকা বিস্তৃত ছিল। এবং ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ  এর মাধ্যমে বাংলাকে বিভক্ত করা হয়েছিল। এর আগে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যা একত্রে ছিল বঙ্গদেশ নামে। 

 

বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে পূর্ববঙ্গ এবং আসাম স্বতন্ত্র প্রদেশের মর্যাদা পেয়েছিল। কিন্তু 1911 সালে হিন্দু সাম্রাজ্যের আন্দোলনে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও বঙ্গদেশ তার পূর্ববর্তী সীমানা ফেরত পায়নি। এর ফলেই বিহার এবং উড়িষ্যা পৃথকপ্রদেশের মর্যাদা লাভ করে। 

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে আরো দেখা যায় বাংলা ভাষাভাষী সিলেট কাছাড়ও গোয়ালপাড়ার একটি অংশ আসাম প্রদেশে থেকে যায়। বিহার ও ছোট নাগপুরিও বাংলা পাশাপাশি অঞ্চল থেকে যায়। 

 

বঙ্গভঙ্গ ভারতের জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা । 

 

বিভক্তির বিরুদ্ধে হিন্দুদের বিক্ষোভ ও সন্ত্রাসবাদের জন্ম নেয় আর এর ফলেই মুসলিম জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করতে গেলে এটাও প্রমাণিত হয় যে ওই সময়েই মুসলিমরা স্বতন্ত্রবাদী হয়ে রাজনীতিতে যোগদান করে। সৃষ্টি হয় মুসলিম লীগের। আর এর ফলেই মুসলিমরা আস্তে আস্তে ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে ওঠে।

 

যেহেতু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিভক্তির মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী ভৌগোলিক অঞ্চল দুটি প্রাচীন আমলে বিভিন্ন নামে পরিচিতি ছিল এবং একাধিক দেশের সংমিশ্রণে গঠিত ছিল। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করতে গেলে বাংলা একটি প্রাচীন দেশ। 

 

বঙ্গ নামে একটি দেশের প্রথম উল্লেখ আছে “ঐতবেয় অরন্যক “ নামক গ্রন্থে। এর সাথে মহাভারত ও রামায়ণে বঙ্গ ও অন্যান্য জনপদের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও জৈন, উপাঙ্গ গ্রন্থে বঙ্গের কথা উল্লেখ আছে। 

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে আরো দেখা যায় সপ্তম শতাব্দীতে বাংলার প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম রাজা শশাঙ্ক এই জনপদ গুলোর গৌর নামে একত্রিত করেন। বাঙালি রাজাদের মধ্যে শশাঙ্কই প্রথম সার্বভৌম নরপতি। তিনি ৬০৬  সালের আগেই স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

 

তার রাজ্যের রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত কর্ণসুবর্ণ।

 

যাইহোক বন্ধুরা আমরা আজ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের অতটা গভীরে যাবো না।আমরা ছোট্ট আকারে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা নেব।

 

আরও পড়ুনঃ

বাংলাদেশের মানচিত্র: এক দেশ, অনেক গল্প

 

বাংলা সাহিত্যের জনক কে?

বাংলা সাহিত্যের জনক বলা হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে। তিনি প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবাহ ও করে তোলেন। বাংলা সাহিত্যের সার্থক রূপকার ও তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কে অভিহিত করেছেন বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী হিসেবে।

 

অন্যদিকে দিকে বাংলা উপন্যাসের জনক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আর আধুনিক বাংলা কবিতার জনক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ব্রাহ্মসমাজ এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন রাজা রামমোহন রায়।

 

বাংলা লোকসাহিত্য

লোকসংস্কৃতির প্রধানতম অঙ্গটি হল লোককথা। যে সকল কথা বা লোককাহিনী গুলো বহু যুগ ধরে লোকমুখে প্রচারিত আছে সেগুলোকেই লোককথা বা লোককাহিনী বলা হয় বা লোকসাহিত্য হিসেবে পরিচিতি পায়। লোকসমাজের প্রচলিত রূপকথা উপকথা নীতিকথা ব্রত কথা পুরাণকথা জনশ্রুতি এসবই লক্ষ কথার অন্তর্গত।

প্রাচীন রূপকথা রূপকথা নীতিকথা ব্রত কথা পুরাণকথা প্রভৃতি একসময় মানুষের সাহিত্য পিপাসা নিবারণ করত একই সঙ্গে সেগুলি সমাজ শিক্ষকের ভূমিকা পালনও করত।

 

আরও পড়ুনঃ 

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদ  

বুদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের রচিত চর্যাপদ গুলো সম্পর্কে ১৯০৭ সালের পূর্বে কোন তথ্য জানা ছিল না। ১৮৮২ সালে প্রকাশিত ‘Sanskrit Buddhist literature in Nepal’ গ্রন্থে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র সর্বপ্রথম নেপালের বৌদ্ধ তান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ করেন। এরপরে ১৯১৬ সালে চর্যাচার্যবিনিশ্চয়, সরহপাদ, ও কৃষ্ণ পাদের দোহা এবং ডকার্নব এ্রর চারটি পুথি একত্রে হাজার বছরের পুরান বাংলা ভাষার বৌদ্ধ গান ও দোহা নামে গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়। 

 

এগুলোর মধ্যে একমাত্র চর্যাচার্যবি নিশ্চয়ই প্রাচীন বাংলার লেখা। অন্য তিনটি বাংলায় নইয়া অপভ্রংশ ভাষায় রচিত। সাহিত্যের ইতিহাস থেকে আরও দেখা যায় চর্যাপদের প্রতিটি যে রূপে পাওয়া গেছে তাতে বোঝা যায় যে এটি বিভিন্ন সময়ে আবির্ভূত বিভিন্ন কোভিদ রচিত কবিতা সমষ্টির সংকলন। 

 

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুঁথিতে মূল মূল চর্যাপদ ও মুনি দত্তের সংস্কৃত টিকা বর্ণিত হয়েছে । প্রতিটি খন্ডিত ছিল বলে টিকাকারের নাম পাওয়া যায়নি । পরে ডঃ প্রবোধ চন্দ্র বাগচী একই সংকলনের তিব্বতি অনুবাদ আবিষ্কার করেন এবং তাতে টীকাকার হিসেবে মনি দত্তের উল্লেখ পাওয়া যায় । আবিষ্কৃত প্রতিটি মুনিদত্তের মূল সংকলন গ্রন্থ নয় এটি ছিল অনলিপি অথবা অনিলিপির অনুলিপি ।

 

চর্যার প্রাপ্ত পুঁথিতে 51 টি পদ ছিল । তার মধ্যে একটি ১১ সংখ্যক পদটিকাকার কর্তৃক ব্যাখ্যা তো হয়নি । আবার পুথীর কয়েকটি পাতা নষ্ট হওয়ায় তিনটি সম্পূর্ণ (২৪,২৫ ও ৪৮) সংখ্যক পদ এবং একটি ২৩ সংখ্যক পদের শেষ অংশ পাওয়া যায়নি। তাই পুঁথিতে সর্ব সমেত সাড়ে ৪৬ টি পদ পাওয়া গেছে । 

 

আরও পড়ুনঃ

Unique Bangla caption যা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের জন্য উপযোগী

 

চর্যাপদের কবি

চর্যাচর্যবিনিশ্চইয়ে মোট ২৪ জন কবি বা পদকর্তার পরিচয় পাওয়া যায় । পদের মাঝে ও শেষে তারা ভনিতা দিয়েছেন । তবে কারো কারো গরুর ভনিতা আছে । নামের শেষে গৌরব সূচক ‘পা’ যোগ করা হয়েছে । চর্যার ২৪ জন পদকর্তা হলেনঃ 

 

লুই, কুককর, বিরুয়া, গুন্ডুরি, চার্টিল, ভুসুকু, কাহ্ন,  কামলি ,ডোম্বি,  শান্তি, বীণা, সরহ,আজদেব, ঢেনঢন, দারিক, ভাদে, দাড়েক, কঙ্কণ, জঅনন্দি, ধাম, তন্ত্রী ও লাড়িডম্বী । তবে লাড়িডোম্বীপার কোন পদ পাওয়া যায়নি । 

 

 

বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

 

এখানে আমরা মূলত বাংলা সাহিত্যের যোগ বিভাগ গুলো নিয়ে আলোচনা করব। বাংলা সাহিত্যের উদ্ভব কাল এবং বাংলা সাহিত্যের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যের অভাব থাকায় বাংলা ভাষার উদ্ভবকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়। 

 

তবে বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে চর্যাপদকেই গুরুত্বের সহিত দেখা হয়। কিন্তু এটি জেনে অবাক হবেন যে এই চর্যাপদের রচনাকাল সম্পর্কেও বাংলা ইতিহাসের পন্ডিতেরা এক মতে পৌঁছাতে পারেনি। 

 

ডঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদ এর রচনাকাল ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। অপরদিকে ডাক্তার সুনীতিকুমার  চট্টোপাধ্যায় এর মতে ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চর্যাপদের কাল নির্ণয় করা হয়েছে।

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস কে

১. প্রাচীন যুগ 

২.মধ্যযুগ এবং

৩. আধুনিক যুগ 

এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই তিন ভাগে ভাগ করার পেছনে চর্যাপদের সূচনা থেকে বর্তমান কাল বিস্তৃত।

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 

 

১. প্রাচীন যুগকে কল্পনা করা হয় ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

২. মধ্যযুগ কে কল্পনা করা হয় ১২০০থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ।

৩. আধুনিক যুগ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিস্তৃত।  

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যায় আধুনিক যুগকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে 

 

যা ১৮০০ থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত আধুনিক যুগের প্রথম পর্যায়ে এবং ১৮৬০ সাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত আধুনিক যুগের দ্বিতীয় পর্যায়ে।

 

আরও পড়ুনঃ

Bangla caption এবং স্ট্যাটাসের জন্য সেরা বাংলা উক্তির সমাহার

 

প্রাচীন যুগ (650 থেকে 1200 খ্রিষ্টাব্দ)

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তৎকালীন বাংলায় অর্থাৎ ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পাল রাজাদের শাসনামল। পাল রাজাদের শাসনকালে বৌদ্ধ ধর্ম গুরুরা বৌদ্ধ ধর্ম চর্চা ও উত্তরীয় কথা গুলো লিপিবদ্ধ করে টিকা তৈরি করে যা পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যে চর্যাপদ নামে পরিচিতি পায়।

 

✓চর্যাপদ হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র নিদর্শন। একে চর্যাচার্যবিনিশ্চয় বা চর্যাগীতিকোষ বা চর্যাগিতিও বলা হয়ে থাকে। 

 

✓চর্যাপদের রচনাকারক বুদ্ধসহজিয়াগণ। চর্যাপদ মূলত গানের সংকলন। 

 

✓চর্যাপদে,  পদে সংখ্যা মোট ৫০টি মতান্তরে ৫১ টি। চর্যাপদের ২৩ জন মতান্তরে ২৪ জন কবির পদ পাওয়া গেছে।

 

✓চর্যার পদগুলো সন্ধ্যা বা সান্ধ্য ভাষায় রচিত।

 

✓চর্যাপদ আবিষ্কার করেছেন পন্ডিত মহামোহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।

 

✓তিনি নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার থেকে ১৯৬০ সালে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।

 

✓১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে চর্যাপদ আধুনিক লিপিতে প্রকাশিত হয়।

 

✓চর্যাপদ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রথম পথটি লুইপার লেখা।

 

✓আধুনিক ছন্দের বিচারে চর্যাপদ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।

 

অন্ধকার যুগ (১২০১ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ)

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যাচ্ছে যে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের পর প্রচলিত ধর্মীয় সাংস্কৃতিতে পরিবর্তন ঘটে। আর এ কারণেই এই সময়ে উল্লেখযোগ্য কোন সাহিত্য রচনা হয়নি। এই কারণেই এ সময়কে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলা হয়।

 

✓তুর্কি আক্রমনের ফলে সমাজ ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মানুষ এ সময় প্রাক্তন পদ্ধতিতে সাহিত্যকর্মে আত্মনিয়োগ করতে ব্যর্থ হন।

 

✓এ সময় রচিত যে সাহিত্যকর্মের সন্ধান পাওয়া যায় তার মধ্যে হল শূণ্যপুরাণ শেখশুভদয়া মূলত সংস্কৃত।

 

শূন্যপূরণের রচয়িতা রামাই পন্ডিত।

 

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

 

১.মধ্যযুগের রচিত বাংলা ভাষার প্রথম কাব্যগ্রন্থ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। 

 

২.মধ্যযুগের সাহিত্যধারা বিভক্ত তিন ভাগে।  

 

যথাঃ 

*প্রাক চৈতন্য যুগ।

*চৈতন্য যুগ। ও 

*চৈতন্য পরবর্তী যুগ । 

 

১.শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের কবি বড়ুচন্ডীদাস। 

 

২.শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে মোট ১৩ টি খন্ড রয়েছে। 

 

আরও পড়ুনঃ

কষ্টের স্ট্যাটাস: আমাদের জীবনে দুঃখের সাথে সম্পর্ক ও সম্ভাবনা

 

 

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য

মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের অনেক প্রতিভাবান কবির সমাবেশ ঘটেছিল। তাদের লেখনী দ্বারা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস অনেকখানি সমৃদ্ধ হয়েছিল। দুই একটি ব্যতিক্রমী রচনা ছাড়া মধ্যযুগের বেশিরভাগ সাহিত্য ছিল দেবতা কেন্দ্রিক।

 

 দেবতাদের স্থপতি বা দেবতা মাহাত্ম্য প্রচার এবং দেবতার প্রতি নিঃশর্ত প্রেম ভক্তি ছিল এই সময়কার সাহিত্যের প্রধান উপজীব্য। তাই বিষয় বৈচিত্রের দিক থেকে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

 

১. অনুবাদ সাহিত্য।

২. মঙ্গলকাব্য।

৩. বৈষ্ণব পদাবলী এবং জীবনী সাহিত্য।

 

শ্রীচৈতন্যদেব ও বৈষ্ণব পদাবলী

 

১.শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনী রচনার মধ্য দিয়ে বাংলায় জীবনী সাহিত্য রচনা শুরু হয়।

 

২.শ্রী চৈতন্য দেবের জন্ম ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দ নবদ্বীপ মৃত্যুর ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ পুরী। 

 

৩.পনেরশো থেকে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ সময়কে চৈতন্য যুগ বলে। 

 

৪.বাংলায় শ্রীচৈতন্যদেবের প্রথম জীবনী গ্রন্থ চৈতন্য ভাগবত। 

 

৫.বৈষ্ণব পদাবলীর পর্যায় গুলি হলঃ  পূর্বরাগ, অভিসা্‌ মিলন, মাধু্‌ ভাব সম্মেলন, আক্ষেপ অনুরাগ,  নিবেদন, প্রার্থনা প্রভৃতি। 

 

৬.বৈষ্ণব পদাবলীর প্রথম পদ কর্তা বাঙালি কবি জয়দেব।।

 

 

আরও পড়ুনঃ

জীবন নিয়ে উক্তি হলো অস্ত্বিত্বের প্রতিধ্বনি 

 

মঙ্গলকাব্য

 

১. মঙ্গলকাব্যে নায়ক নায়িকারা সবাই শাপভ্রষ্ট দেবতা। শাপান্তে  স্বর্গে ফিরে যান। 

 

২.মঙ্গলকাব্যের প্রধান শাখা তিনটিঃ 

 

* মনসামঙ্গল।

 

* চন্ডীমঙ্গল।

 

* অন্নদা মঙ্গল। 

 

৩. মঙ্গলকাব্যে ৬২ জন কোভিদ সন্ধান পাওয়া যায়।

 

৪. চন্ডীমঙ্গল কাব্যধারায় কবি দিজ মাধবকে স্বভাব কাবী বলা হয়

 

৫. চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি কবি হলেন কবি মানিক দত্ত।

 

৬. অন্নদা মঙ্গল কাব্যধারার প্রধান কবি ভারতচন্দ্র রায়।

 

৭. মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি হলেন কবি কানা হরিদত্ত।

 

ময়মনসিংহ গীতিকা

 

১. ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেনের আগ্রহে ও স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর পৃষ্ঠপোষকতায় গীতিকাগুলো সংগ্রহ করেন চন্দ্রকুমার দে।

 

৩. ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়।

 

৪. ময়মনসিংহ গীতিকা বিশ্বে ২৩ টি ভাষার মুদ্রিত হয়।

 

আরও পড়ুনঃ 

 

আধুনিক যুগ ১৮০১ থেকে বর্তমান

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয় ।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী উপন্যাসটি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয় ।

 

১৯৪০ এর ৭ আগস্ট অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ডি.লিট. উপাধি প্রদান করেন।

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বাংলা ছোটগল্পের জনক বলা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘বসন্ত’ গীতিনাট্য কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেন।

 

আরজ আলী মাতুব্বর লৌকিক দার্শনিক হিসেবে খ্যাত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ।

 

নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গল্পের নাম ‘বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী’।

 

‘মুক্তবুদ্ধির চির সজাগ প্রহরী’ নামে আখ্যায়িত হন সাহিত্যিক আবুল ফজল । যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রমাণিত।

 

রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়।

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বাংলা প্রথম সার্থক ট্রাজেডি নাটক ‘কৃষ্ণকুমারী’। যা মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনা করেন।

 

এখন তাহলে একটু চর্যাপদ নিয়ে আলোকপাত করা যাক।

 

 

আরও পড়ুনঃ

ইসলামিক স্ট্যাটাসঃ ইসলামের পথে শান্তি ও হেদায়াতের চাওয়া 

 

উপসংহার

বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই ।  বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস  নিয়ে আমরা এখন থেকে প্রতিনিয়তই কনটেন্ট লিখব।  আপনাদের মধ্যে যারা বাংলা সাহিত্য নিয়ে আগ্রহী তারা  নিয়োমিতই পোড়তে পারবেন এখানে। আপনার মতামত আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপুর্ন। তাই কমেন্ট বক্স অথবা আমাদের সাইট এর  contact পেজে যগাযোগ করতে পারেন।