বাংলাদেশের মানচিত্র । মানচিত্রকে বলা হয় ভূমির সাংকেতিক প্রতিচ্ছবি। মানচিত্র অঙ্কন বা প্রণয়ন করে থাকে একটি দেশের সার্ভে বিভাগ। মানচিত্রের একে ক বিভাগে এক এক রং করা থাকে। এই রং এর কারণ হলো কোন এলাকার ভূমির উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম বস্তু সমূহকে নির্দিষ্ট সাংকেতিক চিহ্ন।
বাংলাদেশের মানচিত্র অথবা যেকোনো দেশের মানচিত্রের কথাই বলুন না কেন। মানচিত্র বলতে সাধারণত ভৌগোলিক মানচিত্রকেই বোঝানো হয়। আজ আমরা এখানে বাংলাদেশের মানচিত্র এবং বিভিন্ন প্রকার মানচিত্র নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশের মানচিত্র
নিচে যে মানচিত্র টি দেখা যাচ্ছে সেটি আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের মানচিত্র। পাশে লাল কালারের যে দেশটি দেখছেন সেটি হচ্ছে ভুটান। ভুটানের ঠিক পশ্চিমে হলুদ কালারের যে দেশটি দেখছেন সেটি নেপাল।
আমাদের এই বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর এবং পূর্ব পাশের বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়েই ভারত অবস্থিত। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব পাশে সীমান্ত ঘেঁষে আছে মিয়ানমার। এখানে লক্ষ্য করছেন নেপাল এবং ভুটান বাংলাদেশের খুব কাছাকাছি অবস্থান করলেও এই দুইটি দেশ কিন্তু বাংলাদেশের সীমানার সাথে লেগে নাই।
বাংলাদেশের সীমানার সাথে লেগে আছে ভারত এবং মিয়ানমার। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দেশ দুইটি। বাংলাদেশ এর সাথে ভারতের সীমান্ত হলো ৪১৫৬ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের এই ভূমি সীমানা হলো বিশ্বের পঞ্চম তম ভূমি সীমান। বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সীমানা হলো ২৭১ কিলোমিটার। বাংলাদেশের দক্ষিণ পাশে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। বাংলাদেশের দক্ষিণ পাশে সাগরের কল ঘেঁষে যে সীমানা সেটিকে বলা হয় উপকূলীয় সীমানা।
বাংলাদেশের উপকূলীয় সীমানার দৈর্ঘ্য ৭১১ কিলোমিটার। ভারতের সাথে 4156 কিলোমিটার এবং মিয়ানমারের সাথে ২৭১ কিলোমিটার এটি পুরোটাই স্থল সীমা।
সাথে দুইটি দেশ মিলে স্থল সীমা হইল মোট ৪৪২৭ কিলোমিটার। তলসীমা এবং জলসীমা দুইটি মিলে মোট সীমান্ত হল ৫১৩৮ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের পশ্চিম পাশে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত। বাংলাদেশের মানচিত্র এর সাথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দৈর্ঘ্য হল ২২১৭ কিলোমিটার।
ভারতের এই পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীর নাম কলকাতা। বাংলাদেশের উত্তর পাশে মেঘালয় রাজ্য অবস্থিত। বাংলাদেশের মানচিত্র এর সাথে মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত দৈর্ঘ্য ৪৪৩ কিলোমিটার।
মেঘালয় রাজ্যের রাজধানীর নাম শিলং। মানচিত্র এর সাথে আসাম রাজ্যের সীমান্ত দৈর্ঘ্য হল ২৬২ কিলোমিটার। আসামের রাজধানীর নাম দিশপুর।
বাংলাদেশের মানচিত্র এর উত্তর পাশে কিছু অংশ জুড়ে ত্রিপরা রাজ্য অবস্থিত। ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত হল ৮ ৫৬ কিলোমিটার। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানীর নাম আগরতলা। মিজোরাম রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য হল ১৮০ কিলোমিটার।
মিজোরামের রাজধানীর নাম আইজল। মিজোরাম রাজ্য থেকেই ভারতের সীমানা শেষ এবং মিয়ানমারের সীমানা শুরু। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের দুইটি রাজ্য বা প্রদেশ রয়েছে। এর একটি নাম চীন রাজ্য।
মিয়ানমারের চীন রাজ্যের নাম হাঁ খা। বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। রাখাইনের রাজধানীর নাম শিত্তে ।
বাংলাদেশের এর সাথে চীন প্রদেশ এবং রাখাইন প্রদেশের সীমানা হল ২৭১ কিলোমিটার। বাংলাদেশের মানচিত্র এর সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্য সংখ্যা পাঁচটি।
এগুলো হলো পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম।
আরও পড়ুন ঃ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রবৃদ্ধি ও উন্নতি
কষ্টের স্ট্যাটাস: আমাদের জীবনে দুঃখের সাথে সম্পর্ক ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশের ভৌগলিক উপনাম
বাংলাদেশের মানচিত্র। বাংলাদেশের একটি অপর নাম হচ্ছে সোনালী আঁশের দেশ। আরেকটি হচ্ছে ভাটির দেশ। নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের মাঝখানে রয়েছে ঢাকা যা বিভাগীয় শহর।
ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। ঢাকা কি মসজিদের শহর বলার পাশাপাশি বলা হয় রিক্সার নগরী। ঢাকার পাশে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ কে বলা হয় প্রাচ্যের ড্যান্ডি। তারপর রয়েছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামকে বলা হয় বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার। চট্টগ্রামকে আরো বলা হয় বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। চট্টগ্রাম কি বলা হয় ১২ আউলিয়ার শহর।
এগুলো ছাড়াও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম কে বলা হয় হেলদি সিটি। তারপরে রয়েছে বান্দরবান জেলা। বান্দরবান কে বলা হয় পাহাড়-পর্বত রহস্যের লীলাভূমি। বাংলাদেশের নিচের দিকে সর্ব দক্ষিণের জেলা হচ্ছে কক্সবাজার। কক্সবাজারকে বলা হয় বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী।
তারপরে হচ্ছে ভোলা জেলা ভোলা জেলাকে বলা হয় দ্বীপের রানী। বরিশালকে বলা হয় বাংলার শস্য ভান্ডার। বাংলার সরিষা ভান্ডার ছাড়াও বরিশাল বিভাগকে বলা হয় বাংলার ভেনিস।
পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা কে বলা হয় সাগরকন্যা।
থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দুটিই দেখা যায়।
হাহা বাংলাদেশের মানচিত্র।
খুলনা জেলাকে বলা হয় কুয়েত সিটি। বগুড়া কে বলা হয় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়।
পঞ্চগড়কে বলা হয় হিমালয়ের কন্যা। বাংলাদেশের সর্ব উত্তর পূর্বের জেলার নাম সিলেট। সিলেটকে বলা হয় ৩৬০ আউলিয়ার দেশ। ১৬০ আউলিয়ার দেশ ছাড়া ও সিলেটকে বলা হয় লন্ডন সিটি। গোমতী নদী কে বলা হয় কুমিল্লার দুঃখ।
আরও পড়ুন ঃ
বন্ধুত্বের সম্পর্ক: এক অমূল্য সম্পদ যা জীবনকে সুন্দর করে
বাংলাদেশের মানচিত্র প্রথম কে আঁকেন
বাংলাদেশের মানচিত্র প্রথম কে আঁকেন। এর উত্তর হল জেম রেনেল ।।
১ জানুয়ারি ১৭৬৭ সাল। “বেঙ্গল সার্ভে” নামে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জেমস রেনেল সর্বপ্রথম ভারতের মানচিত্র অংকন করেন।
যা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বলবো তো ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পরবর্তী এ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে সার্ভে অফ বাংলাদেশ রাখা হয়।
বাংলাদেশের মানচিত্র এর ডিজাইন কে
শিব নারায়ন দাস বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার অন্যতম এবং মূল নকশা কারক।
আরও পড়ুন ঃ
বাংলাদেশের প্রশাসনিক মানচিত্র
একটি দেশের প্রশাসনিক মানচিত্র বলতে সেটাকে বোঝায়। যে মানচিত্রের মধ্যে উক্ত দেশের বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা সমূহের মানচিত্র কে তুলে ধরা হয়। নিচে একটি মানচিত্র দেয়া হলো যেখানে দেশের সকল জেলার নাম সহ দেওয়া আছে।
বাংলাদেশের নতুন মানচিত্র ২০২৩।। বাংলাদেশের বর্তমান মানচিত্র
বাংলাদেশের মানচিত্রে প্রজাপতকালে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কোন রকমের পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় নি। তবে স্বাধীনতার পরবর্তীতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ভেতরে জেলা উপজেলা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিচে যে ছবিটি দেওয়া হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের কিছু নতুন জেলা উপজেলার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন ঃ
বাংলাদেশের মানচিত্র উপজেলা সহ
ছোট্ট এই দেশটির মানচিত্রেও অনেক ছোট। তবে এই ছোট্ট দেশটিকে সুন্দর মত পরিচালনা করার জন্য যে ছোট ছোট অনেক ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মানচিত্র। যেখানে রয়েছে ৬৪ টি জেলা। এই ৬৪ টি জেলাকে আটটি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবং পুরো বাংলাদেশে ৬৪ টি জেলায় ৪৯২ টি উপজেলা রয়েছে।
সর্বশেষ উপজেলার নাম হল হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা।
তবে একথা না বললেই নয় যে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালী জেলার সংখ্যা ছিল মাত্র 19 টি।
আর সর্বপ্রথম ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান বাংলাদেশ জেলা ছিল সতেরোটি। নিচে একটি উপজেলা সহ বাংলাদেশের মানচিত্রের ছবি দেওয়া হল।
আরও পড়ুন ঃ
বাংলাদেশের মানচিত্র বিভাগ
বর্তমান বাংলাদেশে বিভাগ সংখ্যা রয়েছে আটটি। প্রতিটি বিভাগের রয়েছে আলাদা আলাদা মানচিত্র। দেশের বিভাগ ভিত্তিক মানচিত্রের চিত্রগুলো নিচে দেওয়া হল।
বাংলাদেশের মানচিত্র নদী
বাংলাদেশের মানচিত্রের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এটি একটি নদীমাতৃক দেশ। ২০১৩ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গবেষণামতি বাংলাদেশের নদনদীর সংখ্যা ছিল 310। কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে 405টি।
তবে প্রায় নদ-নদী গুলোর উপনদী বা শাখা নদী ও আছে। তাই ধারণা করা যায় যে বাংলাদেশে প্রায় সাতশত ির মত নদী রয়েছে।
যদিও বাংলাদেশের মোট নদীর সংখ্যা নিয়ে তর্ক বিতর্ক আছে। বাংলাদেশের নদনদীর গুলো মানচিত্রের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে নদ-নদী গুলো অবস্থিত।
মানচিত্রে যে নদ-নদী গুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেই নদ-নদী গুলোর মধ্য বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার ১৫৫ কিলোমিটার। তাই সব নদী সমূহে প্রবাহ পথ অবস্থান সম্পর্কে মানচিত্রে উপস্থাপিত আছে।
আরও পড়ুন ঃ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র
এদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র বলতে উক্ত দেশের সার্বভৌমত্বের সীমানা ও রাজনৈতিক এলাকা জুড়ে যে মানচিত্র সেটিকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
মানচিত্রে উল্লেখিত জেলাগুলোকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের রাজনীতি পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের মানচিত্র রাস্তা
বাংলাদেশের মানচিত্রে বাংলাদেশের তৈরি কৃত সকল রোডের ম্যাপ তুলে ধরা রয়েছে। আর আপনি যদি আপনার নিজের লোকেশন কে চেক করতে চান তাহলে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুন ঃ
শেষ কথা
বাংলাদেশের মানচিত্র। মানচিত্র একটি দেশের সার্বভৌম এবং ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাংকেতিক প্রতীক। একটি দেশ তার স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে একটি গর্বিত মানচিত্রের অধিকারী হয়ে থাকে।
পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই দেশকে ভালোবাসুন দেশের মানুষকে ভালবাসুন।