বিড়ালের জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যদি আপনি বিড়াল লালন পালন করে থাকেন । আপনার আদরের পোষা বিড়ালটি যখন অসুস্থ হয়ে যায় তখন আপনি নিশ্চয়ই চিন্তিত হয়ে পড়েন।
জ্বর কোন রোগ নয়, এটি অন্য একটি রোগের উপসর্গ মাত্র। তাই আপনার বিড়াল জ্বরে আক্রান্ত হলে খুব দ্রুত তাকে সুস্থ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
তাহলে আপনাকে অবশ্যই তার জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে রাখতে হবে। বিড়ালটি অসুস্থ হলে তাকে খুব দ্রুত আরামবোধ করানোর জন্য আপনি আপনার করণীয় গুলো পালন করতে পারেন।
আজকের এই পোস্টটিতে আপনি জানতে পারবেন আপনার বিড়ালের জ্বর হলে আপনি তার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেবেন এবং দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারবেন।
আজকের পোস্টটিতে আপনি আরও জানতে পারবেন বিড়ালের জ্বরের কারণ, জ্বরের লক্ষণ জ্বর হলে কি ওষুধ খাওয়াবেন এবং কিভাবে আপনার বিড়ালকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলবেন সবকিছু।
তাহলে চলুন আর সময় নষ্ট না করে পুরো পোস্ট টি পড়ে নিন এবং বিড়ালের জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন।
বিড়ালের জ্বর কি বিড়ালের জ্বর হলে করণীয়
চলুন আজকের পোস্টটি থেকে প্রথমেই জেনে নিন বিড়ালের জ্বর কি? তারপর জানবেন বিড়ালের জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে।
আসলে জ্বর কোন রোগ নয়। জ্বর হলো রোগের উপসর্গ মাত্র। যেকোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের প্রভাবে আপনার বিড়াল যে কোন বয়সে জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। বিড়াল রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য বেশ কিছু কারণ রয়েছে তার মধ্যে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ফাংগাল ইনফেকশন, দুর্বল ইমিউন সিস্টেম, ইনজুরি, টিউমার, ক্যান্সার ইত্যাদি।
বিড়াল জ্বরে আক্রান্ত হলে তার মধ্যে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ হলো শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বমি, দুর্বলতা, পানি শূন্যতা, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি।
সাধারণত বিড়ালের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে থাকে। তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে বেশি বেড়ে গেলে বুঝতে হবে যে বিড়াল জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। বিড়ালের তাপমাত্রা মেপে দেখলে আপনি আপনার বিড়ালের জ্বর হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারবেন।
বিড়াল সম্পর্কে আরও পড়তে ভিজিট করুন নিচের লিঙ্ক এ
বিড়াল সম্পর্কে ১০টি বাক্য || বিড়াল নিয়ে উক্তি
বিড়ালের জ্বর এর কারণ
আপনার আদরের বিড়ালের জ্বর হলে করণীয় কি তা জানার আগে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে বিড়ালের জ্বরের কারণ কি। বিড়ালের জ্বর বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
সাধারণত বিড়ালের বডিতে যে সাধারণ তাপমাত্রা থাকে সেই টেম্পারেচারের চেয়ে বেশি টেম্পারেচার হলে একে Hyperthermia বলে। জ্বর হলো একটি নির্দিষ্ট ধরনের Hyperthermia যাকে Pyrexia বলে।
নিম্নে বিড়ালের জ্বরের কারণ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- টিউমার
- ক্যান্সার
- প্রকৃতিগত কারণে
- মেটাবলিক রোগ
- এন্ডোক্রাইন রোগ
- বিভিন্ন রকম ঔষধ প্রয়োগের কারণে
- ইমিউন ডিজিজ
- ভাইরাল ইনফেকশন
- ফাঙ্গাল ইনফেকশন
- বিভিন্ন রকম টক্সিন ও প্রয়োজন
- ইমিউন সিস্টেমের এক্টিভেশন
- ইনফেকশন (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্যারাসাইট অথবা অন্য মাইক্রো অর্গানিজম)
- অন্যান্য ইনফ্লামেটরি কন্ডিশন
- ভিতরগত ইনজুরি
বিড়ালের জ্বরের লক্ষণ
বিড়ালের জ্বর হলে তার শরীরের বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। এই লক্ষণ গুলোর একটি বা একাধিক বিষয় লক্ষ্য করলে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনার বিড়ালটি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।
এখানে বিড়ালের জ্বর হলে তার শরীরে কি কি লক্ষণ দেখা দেয় তা উল্লেখ করা হলো দেখা দেয় তা উল্লেখ করা হলোঃ
- হাই বডি টেম্পারেচার
- ডিহাইড্রেশন হওয়া
- ক্ষুধামন্দা
- মাসেল দুর্বলতা
- শুষ্ক লোম এবং মুখ
- পানি শূন্যতা
- বমি
- দুর্বলতা
- ঝিমুনি
- নিস্তেজ হয়ে পড়ে
- মুখ করে শ্বাস নেয়া
- ওজন হারানো
- হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
- শক
- কেঁপে কেঁপে উঠা
- গ্রুমিং কমে যাওয়া
- বিষন্ন থাকা
- রেসিপিরেটরি রেট বেড়ে যায়
- গড়বড়
- স্বাভাবিক স্বভাবের পরিবর্তন
- হৃদরোগ
- মৃত্যু
আপনার আদরের পোষা প্রাণীটির মধ্যে উপরের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে খুব দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন এবং দ্রুত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
বিড়াল সম্পর্কে আরও পড়তে ভিজিট করুন নিচের লিঙ্ক এ
বিড়ালের খাবার তালিকা থেকে পুষ্টি চাহিদা পূরণের বিস্তারিত তথ্য
বিড়ালের জ্বর হলে করণীয়
বিড়াল ছানা অথবা প্রাপ্তবয়স্ক বিড়াল যেটাই হোক না কেন যে কোন বয়সে বিড়াল জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের আক্রমণের মাধ্যমে বিড়াল জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে।
জ্বর কখনো হালকা অবস্থায় থাকে আবার কখনো মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তাই খুব দ্রুত বিড়ালের সুস্থতার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
আপনার আদরের বিড়ালটি জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত আরাম দেওয়ার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ফলো করুন।
✓✓ প্রথমেই আপনার বিড়ালের শরীরের তাপমাত্রা কত তা মেপে দেখুন। সাধারণত বিড়ালের শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা হয় ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট থেকে ১০২.৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট। যদি বিড়ালের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে বেশি হয় তাহলে বুঝবেন যে সে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।
✓✓ বিড়ালটি যেন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারে তা নিশ্চিত করুন।
✓✓ শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য তাকে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে পারেন।
✓✓ বিড়ালের গলা স্বাভাবিক রাখার জন্য কিছুটা মধু খেতে দিন।
✓✓ বিড়াল জ্বরে আক্রান্ত হলে বিড়ালটি যেন হাইড্রেটেড থাকে তা নিশ্চিত করুন। ডিহাইড্রেশনের কারণে বিড়াল জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে এজন্য বিড়ালকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং তরল খাবার খেতে দিতে হবে। এই সময় আপনি আপনার বিড়ালকে মুরগির মাংসের গরম ঝোল খাওয়াতে পারেন । তবে খেয়াল রাখতে হবে ঝোল যেন খুব বেশি গরম না হয়।
✓✓ জ্বর খুব বেশি হলে নিকটস্থ পশু চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিড়ালকে ঔষধ খাওয়ান এবং দরকার হলে কিছু টেস্ট করান এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন ।
বিড়ালের জ্বরের ঔষধের নাম
বিড়ালের জ্বর হলে কি ঔষধ খাওয়াবো? বা বিড়ালের জ্বর হলে কি ঔষধ খাওয়াতে হবে? এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর অনেকেই খুঁজে থাকেন। আজ আই উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন।
✓✓ আপনার বিড়ালের জ্বর হলে তাকে নন স্টেরয়েডাল এন্টিইনফ্লেমেটারি ঔষধ দিতে হবে ।
✓✓ দুর্বলতা ও পানিশূন্যতা দূর করার জন্য শিরায় স্যালাইন দিতে হবে।
✓✓ বিড়ালের জ্বর হলে বিড়ালকে কোন ভাবেই প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়ানো যাবে না। কারণ এই ওষুধটি শরীরে গিয়ে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
বিড়ালের জ্বরের ঔষধের নাম কি হবে তা জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি বিড়ালের জ্বর মেপে দেখে সঠিক ঔষধ প্রেসক্রাইব করবেন।
বিড়ালের জ্বর হলে করণীয় চিকিৎসা
বিড়ালের জ্বর খুব সাধারণ একটি অসুখ হলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বর আসলে বিড়ালে সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যদি খুব সামান্য হয় তাহলে অল্পতেই সেরে যায় কিন্তু জ্বরের মাত্রা বেশি থাকলে অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হয়।
চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে সবসময় সাবধান করেন যাতে জ্বরকে অবহেলা না করা হয়। নিচে বিড়ালের জ্বর হলে করণীয় চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
✓✓ জ্বরে আক্রান্ত বিড়ালটি যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
✓✓ শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য পানি দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর শরীর মুছে দিতে হবে।
✓✓ বিড়ালের শরীরের এনার্জি সেভ করার জন্য জ্বরের লক্ষণ গুলো যাতে না বেড়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
✓✓ ২৪ ঘন্টা মধ্যে জ্বর না কমলে খুব দ্রুত পশু চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়াতে হবে।
✓✓ ইনফেকশন এর জন্য জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
✓✓ টিউমার জ্বর হলে অবশ্যই সার্জারি করাতে হবে।
✓✓ অধিকাংশ সময় বিড়াল একদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যেতে পারে। তবে অনেক সময় সুস্থ হতে কিছুদিন সময় লেগে যেতে পারে।
বিড়াল সম্পর্কে আরও পড়তে ভিজিট করুন নিচের লিঙ্ক এ
ইসলামিক বিড়ালের নাম || ছেলে ও মেয়ে বিড়ালের সুন্দর নাম
বিড়াল একটি প্রেমময় প্রাণী বিড়াল এর বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভাস, বাসস্থান ও অন্যান্য তথ্য
বিড়ালের চোখের সমস্যা ও তার প্রতিকার, সাথে ঘরোয়া কার্যকরী সমাধান
শেষ কথা
বিড়ালের জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে লেখা আজকের এই পোস্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আপনি জানতে পেরেছেন বিড়ালের জ্বর কি, বিড়ালের জ্বরের কারণ, বিড়ালের জ্বরের লক্ষণ, এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে।
আপনার আদরের বিড়ালটি কোন ভাবে জ্বরে আক্রান্ত হলে উপরে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করুন এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। যাতে করে আপনার বিড়ালটি দ্রুত সুস্থতা লাভ করতে পারে।
আজকে পোস্টে বিড়ালের জ্বর সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পোস্ট ভালো লাগলে বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন এবং অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করুন। পোস্ট সম্পর্কে কোন কিছু বলার থাকলে নিচে ইনবক্স করুন।
পোস্টটি পুরোটাই পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এ ধরনের আরো নতুন নতুন পোস্ট আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।