প্রিয় পাঠক, বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় ? আপনারা যারা বিড়াল পালন করেন তারা নিশ্চয়ই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। তাহলে আপনার জন্য এই পোস্টটি একদম কার্যকরী। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়, বিড়াল কামড়ালে কি টিকা দিতে হয়, টিকার দাম কত এছাড়াও আরো অনেক তথ্য।
আপনার আদরের বিড়ালটি অনেক সময় রেগে গিয়ে কামড় দিতে পারে অথবা আঁচড় দিয়ে আপনার শরীরে ক্ষত সৃষ্টি করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতে হবে। কতদিনের মধ্যে টিকা নেবেন সেই সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো পেতে চাইলে দ্রুত পুরো পোস্টটি পড়ে নিন। তাহলে আপনি আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন।
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়?
প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা বিড়াল পছন্দ করেন তাদের জন্য আজকে এই পোস্টটি। আপনারা অনেকেই জানতে চান যে আপনার আদরের বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়? আজকে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে যাবেন আশা করি।
বিড়াল কামড়ালে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। বিড়াল কামড় দিলে যদি সে স্থানে ক্ষত হয়ে যায় এবং রক্ত পড়তে থাকে তাহলে জ্বলাতঙ্ক হওয়ার আশঙ্কা খুবই বেশি। সেক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অবশ্যই টিকা দিয়ে দিতে হবে। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টিকা না দিলে গুরুতর সংক্রমণ হতে পারে।
✓✓ বিড়াল কামড়ানোর প্রথম দিন, তৃতীয় দিন, ১৪ তম দিন এবং ২৮ তম দিনে টিকা দিতে হবে।
✓✓ তবে পাঁচ বছরের মধ্যে আপনি যদি এ ধরনের কোনো টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে শুধু তৃতীয় ডোজ টিকা নিলেই হবে।
✓✓ যদি কোন ভাবে আপনি ইমিউনোগ্লোবিন টিকা না পান তবে সে ক্ষেত্রে প্রথম দিন দুই বাহুতে দুটো টিকা দিতে হবে। পরবর্তীতে ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮ তম দিনে অবশ্যই টিকা দিতে হবে।
✓✓ আপনারা যারা বিড়াল পালন করেন তারা বিড়াল কামড় দেওয়ার পূর্বেই ০ এবং ৩ তম দিনে দুটো টিকা নিয়ে রাখবেন। পরবর্তীতে ০, ৭, ২১ তম দিনে টিকা দিলেই হবে।
✓✓ আপনার বিড়াল যদি গৃহপালিত পশুকে কামড়ায় তবে সে ক্ষেত্রে পশুটিকে টিকা দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে প্রাণীটি যদি ০, ৩ এবং ৭ তম দিনে টিকা দেওয়ার পর ১০ তম দিন ও সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে তাহলে ১৪ এবং ২৮ তম দিনে টিকা না দিলেও হবে ।
বিড়াল কামড়ানোর পর সঠিক সমাধান চিকিৎসা গ্রহণ না করা হলে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই বিড়াল কামড়ালে উপরে উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী অবশ্যই টিকা দিতে হবে।
বিড়াল নিয়ে আরও পড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন
বিড়ালের কাশি হলে করণীয় সম্পর্কে জানুন
বিড়াল কামড়ালে কি টিকা দিতে হয়?
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় জানার পরে জানতে বিড়াল কামড়ালে কি টিকা দিতে হয়। আপনারা যারা আদর করে বিড়াল পুষে থাকেন তাদের সাবধান থাকা উচিত। বিড়াল রেগে গেলে কামড়াতে পারে বা আঁচড় দিতে পারে। অসাবধানতাবশত বিড়াল কামড়ে দিলে অবশ্যই টিকা দিতে হবে।
বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিন এর নাম হলো Tetanus Toxoid । বিড়াল কামড়ানোর পরে যদি রক্তপাত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই Tetanus Toxoid ভ্যাকসিন দিতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের তিন ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যায় । বিড়াল কামড়ালে যত দ্রুত সম্ভব দিতে হয়। ভ্যাকসিনের নাম গুলো হলোঃ
১.NOBIVAC Feline 1- HCPCh
২. RABISIN
৩. QUARDRICAT
বিড়াল কামড়ানোর পর ক্ষত তৈরি হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই টিকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কোন কারনে যদি ২৪ ঘন্টা সময় পার হয়ে যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিয়ে নিতে হবে।
বর্তমান সময় টিকা দুই ভাবে দেওয়া হয়।
১. চামড়ায়: চামড়ায় টিকা দেওয়া বেশি কার্যকর এবং এই পদ্ধতির খরচ ও কম।
২. মাংসপেশিতে: মাংসপেশিতে টিকা দেওয়া অধিক কার্যকর। তবে এতে খরচ বেশি হয় এবং দক্ষ চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়।
বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের দাম কত
মূলত বর্তমানে বাংলাদেশে তিন ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যায় যা বিড়ালের কামড়ের পর দেওয়া হয়।
এ তিন ধরনের ভ্যাকসিনের কোনটির দাম কত তা এখানে উল্লেখ করা হলোঃ
১.NOBIVAC Feline 1- HCPCh: NOBIVAC এই ভ্যাকসিনটির দাম ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা ।
২. RABISIN: RABISIN ভ্যাকসিন এর দাম ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা ।
৩. QUARDRICAT: QUARDRICAT এই ভ্যাকসিন এর দাম ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা ।
আপনার গৃহপালিত প্রাণীটি কামড়ালে সেই কামড়ের কারণে কঠিন রোগের সংক্রমণ হতে পারে। বিড়ালের কামড়ের কারণে RABIS নামক রোগ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন দিয়ে নিতে হবে।
জলাতঙ্ক রোগটি মরণব্যাধি একটি রোগ। এই রোগ মস্তিষ্কের একটি গুরুতর অসুখ। তাই অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব এই অসুখ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। গর্ভবতী মহিলা, স্তন্যদানকারী মা, অতি বয়স্ক ব্যক্তি এমনকি শিশুরা ও এই টিকা দিতে পারবে। যদি কোন সন্দেহ থাকে, এমনকি প্রশ্ন থাকলেও ভয়াবহতা বিবেচনা তা করে তাড়াতাড়ি টিকা নিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে।
বিড়াল নিয়ে আরও পড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন
বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
বাচ্চা বিড়াল কামড়ালে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়
বাচ্চা বিড়াল কামড় দিলেও ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন আছে। বিড়ালের কামড় মানুষের জন্য বিপদজনক। শুধু মানুষ নয় অন্য গৃহপালিত প্রাণীর জন্য এটি বিপদজনক হতে পারে। বিড়ালের মুখের ভিতরে এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার রয়েছে যা মানুষ ও অন্যান্য পশুর শরীরে টিস্যু ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
বিড়ালের মুখে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে সেটির নাম হল Pasteurella Multocida । ব্যাকটেরিয়া সংখ্যায় খুবই কম থাকে। বিড়াল কামড়ালে সংক্রমিত হওয়ার পর ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ধীরে ধীরে একটি টিস্যু থেকে অন্য টিস্যুতে ছড়িয়ে যেতে পারে। যেহেতু বাচ্চাগুলোর মুখেও এই ব্যাকটেরিয়া থাকে তাই বিড়াল কামড়ালে অবশ্যই টিকা দিতে হবে।
তবে বিড়ালের বাচ্চা কামড়ানোর পরে যদি ক্ষত সৃষ্টি না হয় এবং রক্ত না পড়ে তাহলে টিকা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। রক্ত না পড়লে এবং ক্ষত না হলে সে ক্ষেত্রে আপনারা প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য ভ্যাকসিন ও গ্রহণ করতে পারেন।
বিড়াল কামড়ালে কয়টি ভ্যাকসিন দিতে হয়
আপনার আদরের বিড়ালটি যদি আপনাকে রাগান্বিত হয়ে কামড় দিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় তা উপরে দেওয়া হয়েছে। বিড়াল কামড়ালে ৪টা টিকা দেওয়ার প্রয়োজন।
সরকারিভাবে টিকা দিলে কোন খরচ হয় না। অর্থাৎ বাংলাদেশের সকল সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। অন্য জায়গা থেকে টিকা দিলে ১০০০ টাকার বেশি খরচ হতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের তিন ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যায় যা বিড়ালের কামড়ানোর জন্য দেয়া হয়। এই তিনটির ভ্যাকসিনের দাম ১০০০ টাকার বেশি। তবে সরকারি ভাবে আপনি কোন টাকা খরচ না করেই টিকা নিতে পারবেন।
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয়
বিড়াল কামড়ালে সাথে সাথেই জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেয় না। লক্ষণ দেখা দেওয়ার জন্য ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ অথবা ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। অর্থাৎ এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে অনেক সময় প্রয়োজন।
জলাতঙ্ক রোগ খুবই মারাত্মক একটি রোগ। বিড়াল বা কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগ হয়। জলাতঙ্ক রোগ একবার একটি মানুষের হলে সেই রোগ থেকে বেঁচে ফিরেছে এমন উদাহরণ খুবই কম। তাই কুকুর বা বিড়াল কামড়ানোর ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই প্রথম ডোজ টিকা নিতে হবে।
আপনারা যারা বিড়াল পালন করে থাকেন তাদেরকে অবশ্যই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বিড়াল যাতে কোন ভাবে আপনাকে অথবা আপনার পরিবারের সদস্যকে কামড় দিতে না পারে সে দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। আর কোনোভাবে যদি কামড় দিয়েও দেয় তাহলে অবশ্যই অবশ্যই টিকা নিতে হবে।
বিড়াল নিয়ে আরও পড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন
বিড়ালের ঠান্ডার ঔষধ || বিড়ালের ঠান্ডা লাগলে করণীয়
বিড়ালের আঁচড়ে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়
বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি সমস্যা হয় এই প্রশ্নের উত্তর অনেকে জানতে চান। বিড়ালের নখের আঁচড় দেওয়ার ফলে যদি ক্ষত সৃষ্টি না হয় এবং রক্ত না পড়ে তাহলে টিকা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
তবে যদি আঁচড় দেওয়ার ফলে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং রক্ত পড়তে থাকে তাহলে অবশ্যই টিকা বা ভ্যাকসিন দিতে হবে। এক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টার মধ্যে টিকা দিয়ে দিতে হবে। না হলে জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
বিড়াল কামড় দিলে যে নিয়মে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হয়। বিড়াল আঁচড় দিলেও সেই নিয়মের ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হয়। বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় তা উপরে দেওয়া হয়েছে। বিড়াল আঁচড় দিলে প্রথম দিন, তৃতীয় দিন, ১৪ তম দিন এবং ২৮ তম দিনে টিকা দিতে হবে।
বিড়াল নিয়ে আরও পড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন
বিড়াল নিয়ে ক্যাপশন বাংলা ও ইংরেজি
শেষ কথা
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় ? আশা করি এই প্রশ্নের উত্তরটি খুব ভালোভাবে পেয়ে গেছেন। আপনারা যারা এই উত্তর টি খোঁজ করছিলেন তারা নিশ্চয়ই বিড়াল পালন করেন। অথবা কোন ভাবে বিড়াল আপনাকে কামড় দিয়েছে। যদি আপনাকে বিড়াল কামড় দিয়ে থাকে তাহলে আর কোনরকম দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিয়ে নিন।
বিড়াল পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ বিড়ালের কামড়ের জন্য আপনার জলাতঙ্কের মতো মরণব্যাধি হয়ে যেতে পারে। তাই আপনি এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের অনেক উপকারে লেগেছে। তাই অন্যদের উপকার করার জন্য তাদের সাথে শেয়ার করুন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।