বিড়ালের ঠান্ডার ঔষধ নিয়ে জানার আগে আপনাকে জানতে হবে ঠান্ডা লাগার লক্ষণ ঠান্ডা লাগলে করণীয় সম্পর্কে। আপনার আদরের বিড়ালের ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার ধরন দেখে বুঝতে হবে যে তাকে কি ধরনের ওষুধ দিতে হবে।
ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বিড়ালের ঠান্ডা লাগতে পারে অর্থাৎ বিড়ালের ফ্লু হতে পারে। এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। ঋতু পরিবর্তনের সময় আপনার বিড়ালের প্রতি আপনাকে বিশেষ যত্নশীল হতে হবে। কারণ বিড়ালের ফ্লু হলো একটি ছোঁয়াচে রোগ ।
তাহলে চলুন আজকের আলোচনা থেকে জেনে নেওয়া যাক বিড়ালের ঠান্ডা লাগার লক্ষণ ঠান্ডা লাগলে করণীয় এবং আপনার বিড়ালের ঠান্ডার ঔষধ সম্পর্কে।
বিড়ালের ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার লক্ষণ
আপনার আদরের বিড়ালটি যদি ফ্লুতে আক্রান্ত হয় তাহলে তার মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো দেখা দেবে। এই লক্ষণগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন এবং যদি নিশ্চিত হতে পারেন যে তার ঠান্ডা লেগেছে তাহলে সঠিক ব্যবস্থা নিন।
১. আক্রান্ত বিড়ালটি অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
২. এই সময় বিড়াল নড়াচড়া করতে পছন্দ করে না। সারাটা দিন শুয়ে বসে কাটিয়ে দিতে চায়। খেলাধুলাও করে না।
৩. ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার কারণে বিড়ালের সর্দি কাশি হতে পারে।
৪. বিড়ালের নাক ও চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর হাঁচি দিবে।
৫. জ্বর হতে পারে।
৬. বিড়াল এই সময় তার মালিক কে কাছে পেলে খামচানোর চেষ্টা করে। দূরে দূরেও থাকতে পারে।
৭. নাক এবং চোখে ঘা হতে পারে।
৮. ক্ষুধামন্দা ও খাবারে অরুচি হয়।
৯. সর্দির কারণে নাক বন্ধ থাকায় নাক দিয়ে নিশ্বাস না দিয়ে মুখে হাঁ করে নিঃশ্বাস নেয়।
১০. ঠান্ডা লাগার জন্য গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যায়।
আপনার আদরের বিড়ালটির মধ্যে যদি উপরের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে বুঝতে হবে ঠান্ডা লেগেছে। এ সময় বড় অভাবে চিকিৎসা করে সুস্থ করার চেষ্টা করতে হবে। যদি ঘরেও আছে কিছু নাই সুস্থ না হয় তাহলে বিড়ালকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের ভেটেরিনারি চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
বিড়াল নিয়ে আরও পড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন
বিড়াল নিয়ে ক্যাপশন বাংলা ও ইংরেজি
বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
বিড়ালের পায়খানা না হলে করনীয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন
বিড়ালের ঠান্ডার ঔষধ
আপনারা তারা বিড়াল লালন পালন করেন তাদের বিড়ালের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে থাকে। এ সমস্যাটি হলো বিড়ালের ঠান্ডা লাগা বা বিড়ালের ফ্লু।
আপনি যদি বাচ্চা বিড়াল নিয়ে থাকেন তাহলে তো আপনার এরকম সমস্যায় পড়তে হবেই। কারণ বাচ্চা বিড়াল খুব তাড়াতাড়ি ফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারে।
আজ আপনাদের কাছে বিড়ালে ঠান্ডার ঔষধ সম্পর্কে আলোচনা করব। এখানে দুইটা ওষুধের কথা উল্লেখ করা হলো:
১. Cef-3 (20 ml dry powder): এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক। এই ওষুধটি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সরবরাহ করে থাকে।
Cef-3 এই ওষুধটি ১২ ঘন্টা পর পর সাতদিন খাওয়াতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এই ঔষধ আপনি যে কোন ফার্মেসিতে গেলে পেয়ে যাবেন। অথবা বিড়ালের জন্য বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে এরকম কোন জায়গায় গেলেও ঔষধটি পেয়ে যাবেন।
২. Han-Amine: এটি একটি Multivitamin। এই ওষুধটি ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সরবরাহ করে থাকে।
এই মাল্টিভিটামিন ৬ ঘন্টা পর পর দুই বেলা সাত দিন পর্যন্ত খাওয়াতে হবে। যে কোন ওষুধ খাওয়ানোর পূর্বেই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই ওষুধটি ড্রপারের সাহায্যে খাওয়াতে পারেন।
Han-Amine মাল্টিভিটামিন খাওয়ানোর ৩-৪ দিনের মধ্যেই আপনি বিড়ালের মধ্যকার দূর্বল ভাব কেটে যাবে এবং তার মধ্যে অনেকটাই সুস্থ ভাব দেখতে পাবেন।
বিড়াল নিয়ে আরও পড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন
বিড়ালের উকুন দূর করার উপায় সম্পর্কে সহজেই জেনে নিন
শীতকালে বিড়ালের যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা
বিড়ালের বয়স বোঝার উপায় || ৬ টি সহজ উপায়ে
বিড়ালের ঠান্ডার ঔষধ / বিড়ালের সর্দির ঔষধ
আপনারা অনেকে বিড়াল লালন পালন করে থাকি। বিড়াল লালন পালনের সময় আপনার বিড়াল যেকোনো সময় ঠান্ডা লাগা অর্থাৎ সর্দিতে আক্রান্ত হতে পারে। বিড়ালের ঠান্ডার ঔষধ বা বিড়ালের সর্দির ঔষধ সম্পর্কে আপনাদের অনেকেরই ধারণা নেই।
তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজকের এই লেখাটি। আপনার আদরের বিড়ালটির ঠান্ডা লাগার কারণে বুকে কফ জমে গেলে এবং ঘরঘর শব্দ করলে আপনি নিচের ওষুধটি খাওয়াতে পারেন।
Zimax (১৫ মিনি ড্রাই পাউডার): এটি স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির একটি ঔষধ। এটি বিড়ালের ঠান্ডা লাগা দূর করার জন্য খুবই উপকারী একটি ঔষধ।
বিড়ালের ঠান্ডা লাগলে করণীয়
আপনার বিড়ালের ঠান্ডা লাগলে বা ক্যাট ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার পর পরে দ্রুত তাকে অন্য বিড়াল থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে। কারণ হলো একটি ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত বিড়াল অন্য বিড়ালের কাছাকাছি থাকলে সে অন্য বিড়ালের ও এই রোগ হয়ে যেতে পারে।
বিড়ালের ঠান্ডা লাগলে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
১. আক্রান্ত বিড়ালকে পরিষ্কার, গরম ও স্বাস্থ্যকর জায়গায় রাখতে হবে।
২. নাক ও চোখ দিয়ে যদি পানি বের হয় তাহলে কিছুক্ষণ পর পর মুছে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
৩. এক দুই ফোঁটা নরসল স্যালাইন ড্রপ দিয়ে কটনবাড ভিজিয়ে চোখ নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
৪. পুষ্টিকর খাবারের সাথে সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে।
৫. আক্রান্ত বিড়ালটি অসুস্থতার কারণে হলে খেতে চাইবে না। এ সময় তাকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
৬. যদি কোনভাবে খাবার খাওয়ানো যায় তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্যালাইন দিতে হবে।
আপনি যদি উপরে নিয়ম গুলো সঠিকভাবে মেনে চলেন তাহলে পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই আপনার বিড়াল সুস্থ হয়ে উঠবে। একটা সময়ের মধ্যে সুস্থ না হলে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
বিড়াল নিয়ে আরও পড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন
বিড়ালের জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে
বিড়াল সম্পর্কে ১০টি বাক্য || বিড়াল নিয়ে উক্তি
বিড়ালের খাবার তালিকা থেকে পুষ্টি চাহিদা পূরণের বিস্তারিত তথ্য
বিড়ালের ফ্লু ভ্যাকসিন
বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন দিতে হয়। তার মধ্যে একটি ভ্যাক্সিন হলো বিড়ালের ফ্লু ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিন হলো একটি প্রতিশোধক যা বিড়ালের শরীরে এন্টিবডি বৃদ্ধি করে এবং কোন ধরনের রোগে সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
বিড়ালকে ভ্যাকসিন দিলে সে নিজে যেমন সুরক্ষা পায় তেমনি যে বিড়াল লালন পালন করে সেও সুরক্ষিত থাকতে পারে। এজন্য নিয়মিত এক বছর অন্তর অন্তর বিড়ালকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। বিড়ালের এমন কিছু কিছু মারাত্মক রোগ আছে যার কারণে বিড়ালটি মারা যেতে পারে। এজন্য বিড়ালের রোগ হওয়ার আগেই তার রোগ প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন দিতে হবে।
বিড়ালের বয়স ৩ মাস হওয়ার পর পরই তাকে প্রথম ভ্যাকসিন দিতে হয়। একবার ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে বিড়ালের শরীরে তার মেয়াদ ১ বছর পর্যন্ত থাকে। এজন্য প্রতি বছরে একবার করে ভ্যাকসিন দিয়ে নিতে হয়।
বিড়ালের ভ্যাকসিন বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের তিন রকমের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ভ্যাকসিন গুলো হলো:
- Nobivac® Feline 1 – HCPCh
- Rabisin® vaccine
- Quadricat® vaccine
টিকা দেওয়া হয়নি এমন বিড়াল খুব দ্রুত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই আগে থেকেই টিকা দেওয়া থাকলে বিড়ালের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
বিড়াল নিয়ে আরও পড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন
ইসলামিক বিড়ালের নাম || ছেলে ও মেয়ে বিড়ালের সুন্দর নাম
বিড়াল একটি প্রেমময় প্রাণী বিড়াল এর বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভাস, বাসস্থান ও অন্যান্য তথ্য
বিড়ালের চোখের সমস্যা ও তার প্রতিকার, সাথে ঘরোয়া কার্যকরী সমাধান
শেষ কথা
আশা করি বিড়ালের ঠান্ডার ঔষধ নিয়ে লেখা এই পোস্টটি পড়ে আপনি বেশ উপকৃত হয়েছেন। এখানে শুধু বিড়ালের ঔষধ নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। এরমধ্যে রয়েছে বিড়ালের ঠান্ডা লাগার বিভিন্ন লক্ষণ, ঠান্ডা লাগলে করণীয় এবং ভ্যাকসিন সম্পর্কে।
আপনি আপনার বিড়ালের সঠিক দেখাশোনা করলে সে সুস্থ থাকতে পারবে । যদিও আপনার বিড়ালটি কোন ভাবে ঠান্ডা লাগায় আক্রান্ত হয় তাহলে উপরের করণীয় পালন করে খুব দ্রুত বিড়ালকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন।
আমাদের পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। আজ এ পর্যন্তই । ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।