বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ

বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ নিয়ে জানার পাশাপাশি আপনি আজকের এই পোস্টে কিডনি রোগের কারণ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাবেন ‌।

কিডনি শরীর থেকে বজ্র পরিশোধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি বিড়ালের পেটের দুই পাশে দুটি কিডনি থাকে। কিডনিগুলো শরীরের খনিজ পদার্থ, তরল এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে।

বর্তমান বিশ্বে প্রতি ৪৫ টি বিড়ালের মধ্যে ১টি বিড়াল কিডনি জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এই রোগটি সম্পর্কে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

আজকের এই পোস্টটি থেকে আপনারা জানতে পারবো বিড়ালের কিডনি রোগের কারণ, বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ এবং কিডনি রোগের চিকিৎসা  সম্পর্কে।

বিড়ালের কিডনি রোগের কারণ

কিডনি বিড়ালের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। অঙ্গটি বিড়ালের শরীরের ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলোর( পানি, খনিজ পদার্থ ও ইলেক্ট্রোলাইট) ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই অঙ্গটি বিভিন্ন কারনে রোগে আক্রান্ত হতে পারে বিড়ালের কিডনি রোগ হলে বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ হিসেবে অনেক লক্ষণ দেখা যায়।

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক বিড়ালের কিডনি রোগের কারণ গুলো কি কি।

√ উচ্চ রক্তচাপ ।

√ ক্যান্সার ।

√ কিডনিতে আঘাত পাওয়া।

√ মূত্রনালীর স্থানান্তরের বাধা (যেমন কিডনিতে পাথর)।

√ বিষাক্ত পদার্থ এক্সপোজার, বিশেষ করে এন্টিফ্রিজ সংক্রমণের জন্য।

√ ইমিউনোলজিক্যাল রোগ ।

√ বংশগত রোগের কারণে ।

√ কিডনিতের রক্ত প্রবাহ হ্রাসের কারণে ।

বিডাল নিয়ে আরও পোড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন 

বিড়ালের ডিপথেরিয়া রোগের লক্ষণ || ডিপথেরিয়া রোগের কারণ

বিড়ালের কৃমির ঔষধের নাম এবং বিড়ালের কৃমির প্রকারভেদ

বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়? সঠিক তথ্য

বিড়ালের কাশি হলে করণীয় সম্পর্কে জানুন

বিড়ালের কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ কি কি

 

বিড়ালের-কিডনি-রোগের-লক্ষণ

কিডনি রোগের অনেক লক্ষণ আছে এর মধ্যে প্রাথমিক কিছু লক্ষণ হলোঃ

✓ ঘন ঘন প্রস্রাব করা।

✓ শরীরের স্কিনে লাল লাল র‍্যাস বের হওয়া।

✓ অল্প খেলাধুলা করে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া।

✓ শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।

✓ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট এবং পা, মুখ এই অংশ গুলো ফুলে যাওয়া।

✓ দীর্ঘ সময়ে ঘুম ঘুম ভাব অর্থাৎ অবসাদগ্রস্থ থাকা।

✓ শরীরের মধ্যে ঘাড় এবং কাঁধের অংশে ব্যথা।

বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ

এছাড়াও কিডনি প্রোটিন, পানি সংরক্ষণ করে এবং এরিথ্রোপয়েটিন নামক হরমোন তৈরি করে। পাশাপাশি রক্তচাপ লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন বজায় রাখতে সাহায্য করে।

বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ হিসেবে নিম্নের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়।

√ ওজন হ্রাস ।

√ বমি বা ডায়রিয়া ।

√ উষ্ণতা বৃদ্ধি ।

√ পানি শূন্যতা ।

√ ক্ষয়ক্ষতি ।

√ কিডনি অঞ্চলে ব্যথা ।

√ ট্রে থেকে অপহরণ ।

√ নিরূদন ।

√ জল খরচ পরিবর্তন ।

√ মুখের মধ্যে আলসার 

√ পদস্খখলন ।

√ রক্তপাত ।

√ শ্বাসে কোষ্ঠবদ্ধতা ।

√ রক্তাক্ত বা মেঘলা প্রস্রাব ।

√ প্রস্রাবের সময় পরিবর্তন।

√ অস্বাভাবিক এলাকায় মূন্ত্রপাত বা ব্যথা 

বিডাল নিয়ে আরও পোড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন 

বিড়ালের বমি হলে করণীয় ঘরোয়া চিকিৎসা

বিড়ালের ঠান্ডার ঔষধ || বিড়ালের ঠান্ডা লাগলে করণীয়

বিড়াল নিয়ে ক্যাপশন বাংলা ও ইংরেজি

বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন 

বিড়ালের কিডনি রোগের চিকিৎসা

বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে তাকে অবশ্যই পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। পশু চিকিৎসক ঐ শারীরিক পরীক্ষা পরিচালনা এবং রক্ত প্রস্রাবের নমুন নিবেন। আল্ট্রা সাউন্ড, রেডিওগ্রাফি, রক্তচাপের পরিমাপ এবং কিডনি বায়োপসি করার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়।

কিডনি রোগ নির্ণয়ের পরে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেবেন। নিম্নলিখিত চিকিৎসা গুলো চিকিৎসক দিতে পারেন।

✓✓ প্রস্রাব আউটপুট শক্তিশালী করার জন্য নির্দিষ্ট ঔষধ দেবেন।

✓✓ থেরাপিটিক ডায়েট।

✓✓ ইনফিউশন থেরাপি।

✓✓ রেনাল ব্যর্থতার কারণে চিকিৎসা (যেমন আন্টি antifreeze, বিষাক্ত সংক্রমণ)

✓✓ অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা।

✓✓ উচ্চ রক্তচাপ, বমি ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের ঔষধ।

✓✓ ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স রোগের চিকিৎসা।

✓✓ ডায়ালাইসিস।

✓✓ কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন।

কিডনি রোগ মূলত চারটি পর্যায়ে থাকে। বিড়ালের কিডনি রোগ কোন পর্যায়ে আছে সেটি নির্ণয় করার পর চিকিৎসা প্রয়োজনে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বিডাল নিয়ে আরও পোড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন 

বিড়াল নিয়ে কবিতা

শীতকালে বিড়ালের যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা

বিড়ালের বয়স বোঝার উপায় || ৬ টি সহজ উপায়ে

বিড়ালের জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে

 

বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ হিসেবে বিড়ালের কিডনি ব্যর্থতার গন্ধ কেমন

বিড়ালের-কিডনি-রোগের-লক্ষণ

বিড়ালের কিডনি ব্যর্থতার গন্ধ কেমন তা জানতে চান অনেকে। কিডনি ব্যর্থতার গন্ধ  শ্বাসে এমোনিয়ার মত গন্ধের মতো । এটি বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ হিসেবে পরিচিত।

কিডনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ ।এটি ফিল্টারিং এবং প্রস্রাবের আকারে বজ্র অপসারণ করে। বিড়ালের শরীরে মানুষের মত দুটো কিডনি থাকে। এমনকি মানুষের মত, বিড়ালের শরীরের কিডনি ব্যর্থতা ঘটতে পারে।

ফলে অঙ্গটি সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিডনি ব্যর্থতা জীবনের জন্য দুর্বিসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যদি কোন বিড়ালের এ ধরনের রোগ হয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ ও বিড়ালের কিডনি ব্যর্থতার ধরন

বিড়ালের কিডনি ব্যর্থতা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো একিউট কিডনি ফেইলিউর এবং অন্যটি হলো দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ। নিচে রোগের ধরন দুটি বর্ণনা করা হলো।

একিউট কিডনি ফেইলিউরঃ

একিউট কিডনি ফেইলিউর (এটিকে একিউট রেনাল ফেইলিউর ও বলে) হলে বিড়ালের কিডনি হঠাৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি সাধারণত কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিনের মধ্যে হতে পারে। কিডনি রোগের এই ধরনটি বিষের কারণে দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

ARF চিকিৎসা, সহায়ক যত্ন এবং সময়ের সাথে কিছু কিডনির কার্যকারিতা উদ্ধার করতে সহায়তা করে। চিকিৎসার করার পরে ARF কিডনি ৫০% এর ক্ষেত্রে শেষ হয়ে যায়। তবে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKD) এর তুলনায় এক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

বিডাল নিয়ে আরও পোড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন 

বিড়াল সম্পর্কে ১০টি বাক্য || বিড়াল নিয়ে উক্তি 

ইসলামে বিড়াল পালনের উপকারিতা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

বিড়ালের খাবার তালিকা থেকে পুষ্টি চাহিদা পূরণের বিস্তারিত তথ্য

বিড়ালের পায়খানা না হলে করনীয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগঃ

দীর্ঘস্থায় কিডনি রোগ অর্থাৎ CKD যখন শেষ পর্যায়ে চলে যায় তখন একটি রেনাল ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যায়। যা কিডনি রোগের চার নম্বর পর্যায়ে হিসেবে বিবেচিত হয়। বিড়ালের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ এখানে মাস বা বছর ধরে কিডনির টিস্যুর ক্রমশ ক্ষয় ঘটে। 

CKD রোগের ক্ষেত্রে ক্লিনিকার লক্ষণ দেখা যায় যখন ই তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এটি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলার সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থা না নিলে শারীরিক কাজ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়।

বিড়ালের কিডনি রোগের চারটি ধাপ কি কি

বিড়ালের কিডনি রোগ একটি জটিল এবং কঠিন রোগ। এই রোগটি চারটি পর্যায়ে রয়েছে। কোন বিড়াল যদি এই রোগের শেষ পর্যায়ে চলে যায় তাহলে সে আর বেশি দিন বাঁচে না ‌। বিড়ালের কিডনি রোগের চারটি ধাপ রয়েছে। নিচে ধাপ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ

পর্যায় 1:

এই ধাপে কিডনি রোগের ক্লিনিক্যাল লক্ষণগুলো সাধারণত স্পষ্ট হয় না ।

পর্যায় 2:

বিড়াল যখন কিডনি রোগের দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছায় তখন ক্লিনিক্যাল লক্ষণ গুলো কিছুটা প্রকাশ পেতে থাকে।

পর্যায় 3:

কিডনি রোগের এই ধাপে ক্লিনিক্যাল লক্ষণগুলো অনেকটাই প্রকাশ পায়। এই সময় বিড়াল প্রায়ই অসুস্থ বোধ করতে থাকে।

পর্যায় 4:

এটি হলো কিডনি রোগের শেষ ধাপ। এই ধাপে বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়। এই সময় বিড়ালের অবস্থা খুবই সংকটপন্ন হয়ে যায়। এ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে বিড়াল খুব বেশি দিন বাঁচতে পারে না।

কিডনি রোগে আক্রান্ত বিড়াল কত দিন বাঁচে

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে একটি বিড়াল কত দিন বাঁচবে তা নির্ভর করে তার কিডনি রোগের পর্যায়ের উপর। যদি বিড়ালের তীব্র রেনাল ব্যর্থতা হয় তাহলে সে কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারে। যদি বিড়ালের কিডনি রোগের  লক্ষণ গুলো উন্নতির দিকে না যায় তাহলে পশু চিকিৎসক সম্ভবত ইউথানেশিয়ার সুপারিশ করবেন‌ ।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত বিড়াল যদি শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অর্থাৎ পর্যায়ে ৪ এ চলে যায় তাহলে বিড়ালদের বেঁচে থাকার সময়সীমা থাকে 35 দিন। 

কিডনি রোগের কোন পর্যায়ে প্রস্রাবে প্রোটিন থাকে

কিডনি রোগ একটি জটিল ও কঠিন রোগ। বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ হিসেবে বিভিন্ন লক্ষণ ও রয়েছে। এর মধ্যে একটি লক্ষণ হলো প্রস্রাবে প্রোটিন আসা।

বিড়ালের কিডনি রোগের মূলত চারটি পর্যায়ে রয়েছে। বিড়ালের রোগটি যখন ১ নং পর্যায়ে থাকে তখন তার প্রস্রাবে প্রোটিন থাকে। এই পর্যায়ে স্বাভাবিক আনুমানিক গ্লোমেরুলার পরিস্রাবন আর ৯০ বা তার বেশি। শুধুমাত্র প্রোটিনের উপস্থিতি থাকলে আপনি বুঝবেন যে আপনার বিড়াল কিডনি রোগের প্রথম পর্যায়ে রয়েছে।

বিডাল নিয়ে আরও পোড়তে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন 

বিড়ালের উকুন দূর করার উপায় সম্পর্কে সহজেই জেনে নিন

ইসলামিক বিড়ালের নাম || ছেলে ও মেয়ে বিড়ালের সুন্দর নাম ||

বিড়াল একটি প্রেমময় প্রাণী বিড়াল এর বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভাস, বাসস্থান ও অন্যান্য তথ্য

বিড়ালের চোখের সমস্যা ও তার প্রতিকার, সাথে ঘরোয়া কার্যকরী সমাধান

শেষ কথা

বিড়ালের কিডনি রোগের লক্ষণ নিয়ে লেখা আজকের পোস্টটি আপনাকে কিডনি রোগ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য লেখা হয়েছে। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন এই রোগের কারণ এবং লক্ষণ কি কি থাকে। রোগটি চিকিৎসা কিভাবে করবেন সেটিও বুঝতে পেরেছেন আশা করি।

এই পোস্টটিতে কিডনি রোগ সম্পর্কে আপনি আপনার প্রআয় সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। এই লিখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।

পোস্ট সম্পর্কে কোন কিছু বলার থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। বিড়াল সম্পর্কে আরো অন্যান্য তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। সেখানে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পেয়ে যাবেন। আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।